শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্বাচন নিয়ে পানি ঘোলা করার সুযোগ নেই : প্রধানমন্ত্রী

মিয়ানমারের দমন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য সমস্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচন যথাসময়েই হবে। এ নিয়ে অহেতুক পানি ঘোলা করার সুযোগ নেই।’ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সব নিয়মকানুন যারা ভেঙে ফেলেছিল, কোন মুখে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে!’

গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভাপতির সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন,  ‘আমরা একদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়  দিচ্ছি, অন্যদিকে মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নিতে চাপও দিচ্ছি। একটি দেশের নাগরিক কেন শরণার্থী হয়ে আরেক দেশে এসে আশ্রয় নেবে? এটা ওই দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। বিষয়টি মিয়ানমারকে উপলব্ধি করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিগত সহিংসতার জেরে নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আর এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত আছে।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে একটা ঘটনা ঘটল, উদ্বাস্তু হয়ে আমাদের দেশে অনেকে এল। ১৯৭৮ সাল থেকে এ রকম উদ্বাস্তু আসছে। মিয়ানমারে একেকটা ঘটনা ঘটে, আর আমাদের এখানে উদ্বাস্তুরা আসে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের আশায় আসছে। নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা তাদের আশ্রয় দেওয়ার এবং কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছি যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়।’ এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সরকারের দমন প্রক্রিয়া প্রতিবেশী বাংলাদেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে।’ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে এগিয়ে যাক। আমরা চাই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। এটাই ছিল জাতির জনকের স্বপ্ন।’ এ সময় তিনি ১৫ আগস্টের নৃশংস ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের কথা স্মরণ করেন। বেগম আইভি রহমানসহ সেদিন দলের জন্য প্রাণ দেওয়া ত্যাগী নেতাদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নিয়ে অহেতুক পানি ঘোলা করার সুযোগ নেই।’ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সব নিয়মকানুন যারা ভেঙে ফেলেছিল, কোন মুখে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে তখন হাসি পায়। কেননা এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বন্দুকের মুখে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। হ্যাঁ-না ভোটের নামে তামাশা করেছিলেন। আর এই দলের বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে জনগণের আন্দোলনের মুখে দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিএনপি মাগুরায় এবং ঢাকায় উপনির্বাচনে মোসাদ্দেক আলী ফালুর ভোট জালিয়াতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও প্রহসনের নির্বাচন করেছিল। বিপরীতে আওয়ামী লীগ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকার ব্যবস্থাসহ নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিল।’ ভোটাধিকার জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তার দল তাতে বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষ শান্তিতে আছে। অন্যদিকে ভোট চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানি লন্ডারিং এবং লুটপাটে ব্যস্ত ছিল বিএনপি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু আঁতেলশ্রেণির সুশীল আছেন, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ আছে কিন্তু নির্বাচনে জেতার সামর্থ্য নেই। এদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ করতেই অনেক সময় জনগণকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার, ভোটাধিকার হারাতে হয়।’ এ সময় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কাজ করার তাগিদ দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।

কোষাধ্যক্ষ আশিক ও তার ছেলেকে তুলাধোনা : এদিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের কোষাধ্যক্ষ এইচ এম আশিকুর রহমান ও তার ছেলে রাশেক রহমানকে তুলাধোনা করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। খোদ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পিতা করছেন এমপি নির্বাচন, ছেলে করতে চান সিটিতে। এক পরিবারের সবাইকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। দলের আরও ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মী রয়েছে, তাদেরও মূল্যায়ন করতে হবে। পিতা, না পুত্র—কে নেবে মিঠাপুকুরের আসনের নমিনেশন সেটা আপনাদেরই ঠিক করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ছেলে চাইলে তাকেই দিতে হবে। তবে তারা রংপুর সিটির নির্বাচনে যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ বৈঠকের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ ও আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও চার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং একজন কেন্দ্রীয় সদস্য বক্তব্য রাখেন। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘রংপুর বিভাগের বেহাল সাংগঠনিক অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় নেতা আশিকুর রহমান নিজেই দায়ী। তার ছেলে রাশেক রহমানই সেখানকার হর্তাকর্তা। অন্য নেতা-কর্মীদের কোনো মূল্যায়ন নেই। নিজের ইচ্ছেমতো ইউনিয়ন কমিটি করছেন। জেলা অনুমোদন না দিলেও তাদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তারা অনেকেই নতুন মুখ, যারা হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়ে দলে জায়গা করে নিচ্ছেন। রাশেক রহমান সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তার কারণে অন্য প্রার্থীরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।’ বক্তব্যের মধ্যে সে নেতাকে থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে যত বড় নেতা হোক, সংগঠন সংগঠনের মতো চলবে। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সংগঠন চলবে না। আগামীতে মিঠাপুকুরে কে নির্বাচন করবে সে সিদ্ধান্ত বাপ-ছেলেকেই নিতে হবে। দলে যেন অনুপ্রবেশকারী হিসেবে কেউ ঢুকতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’

বিমসটেক বিদায়ী মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক : এর আগে সকালে আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের বিদায়ী মহাসচিব সুমিথ নাকানদালা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সরকারের দমন প্রক্রিয়া প্রতিবেশী বাংলাদেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ তত্পরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ইতিপূর্বে মিয়ানমারে (রাখাইন রাজ্য) সংঘটিত (পুলিশ চেকপোস্টে হামলা সম্পর্কিত খবর) কখনো সমর্থন করে না। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি ব্রিফিংয়ে জানান, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাখাইনে যে প্রক্রিয়ায় নেপিডো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা বাংলাদেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে।

 প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে মিয়ানমারের এ ঘটনাকে সমসাময়িক বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই ভয়াবহতার বিরুদ্ধে সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর