শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশ্রয় দিন কূটনৈতিক তৎপরতা চালান : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক


আশ্রয় দিন কূটনৈতিক তৎপরতা চালান : ফখরুল

মানবিক দিক বিবেচনায় মিয়ানমারে সেনা অভিযানের পর জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সংকট সমাধানে দেশটির সরকারকে বাধ্য করতে ‘সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সকালে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের ঘটনায় সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। কূটনৈতিক ও মানবিক দিক থেকে তাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে দীর্ঘ এই মানববন্ধন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টায়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধের দাবি সম্বলিত নানা ব্যানার ও প্লাকার্ড বহন করে। ঢাকাসহ সারা দেশে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি একযোগে পালনের ঘোষণা থাকলেও বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ তাদের এ কর্মসূচি করতে দেয়নি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া মানববন্ধনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ডা. ফরহাদ হোসেন ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, গৌতম চক্রবর্তী, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, মীর সরাফত আলী সপু, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, ফুটবলার আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, উত্তরের আহসান উল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জেবা খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মত্স্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মিলন মেহেদী, জাসাসের শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ছাত্রদলের আকরামুল হাসানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হোক। তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে এই রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক। ওরা হিন্দু না মুসলিম— এটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই, ওরা মানুষ। সেই মানবতার বিরুদ্ধে আজকে মিয়ানমার সরকার যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন, আমরা আজকে জনমত সংগঠিত করে সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তারা যেন এই গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’ মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘন করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন তাদের বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে তখন এই সরকার চুপ করে থাকে। এটা হচ্ছে এদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির পরিচায়ক।’ ১৯৭৯ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে একই ঘটনা ঘটেছিল, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। তখন তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, খাদ্য ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেই সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে এগ্রিমেন্ট করেছিল তৎকালীন সরকার। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়াও ১৯৯২ সালে যখন  রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে আবার পালিয়ে চলে আসে তখনো তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছিলেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে।’ রোহিঙ্গা সংকটের এ পরিস্থিতিতে একটি মাত্র সমাধান রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘তা হচ্ছে— আমরা মানবতার হাত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাড়িয়ে দেব। সারা বাংলাদেশের মানুষ এ জন্য প্রস্তুত। সরকার যদি এ কঠিন সত্যকে স্বীকার না করে, তাহলে তারা দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগ করুক, এই হচ্ছে আমাদের দাবি।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় মিয়ানমারের এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার দিক থেকে এবং মানবেতর যে অবস্থা তার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ আমরা নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়টি তুলতে পারিনি। এ ব্যাপারটিকে সেখানে নিয়ে যেতে হয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিবকে। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না।’ রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের কাছ থেকে চাল কিনতে যাওয়ার সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার; অথচ সেই দেশের কাছে খাদ্য-চাল আনতে গেছেন আমাদের খাদ্যমন্ত্রী সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে। অর্থাৎ নাফ নদের রক্তাক্ত লাশের ওপর দিয়ে কামরুল ইসলাম গেছেন মিয়ানমারে। কত বড় নতজানু এই সরকার, প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন মিয়ানমারে যাচ্ছেন? কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে চাল আছে, সেখানে না গিয়ে কেন মিয়ানমার যাচ্ছেন?’

সর্বশেষ খবর