সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : হাসানুল হক ইনু

রাজনৈতিক মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চিরতরে বন্ধ করতে হবে

রাজনৈতিক মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চিরতরে বন্ধ করতে হবে

একবার রাজাকার সমর্থিত সরকার, আরেকবার মুক্তিযোদ্ধা সমর্থিত সরকার। এই রাজনৈতিক মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। রাজাকার, জঙ্গিগোষ্ঠীকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানপন্থিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন। এ ছাড়া ৫৭ ধারা এবং সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড গঠন নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রীর দফতরে গত বৃহস্পতিবার এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশে তো নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

হাসানুল হক ইনু : আমরা বর্তমান পরিস্থিতিটাকে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের যুদ্ধ পরিস্থিতি বলে মনে করছি। এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাজাকার, জঙ্গি-সন্ত্রাস এবং ’৭১, ’৭৫ ও ২১ আগস্টের খুনি চক্রের, আগুনসন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে, এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা একটা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।

ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথে রাখতে হলে রাজাকার, জঙ্গি চক্র ও তার পৃষ্ঠপোষক বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া চক্রকে ক্ষমতার বাইরে রাখাও আরেকটি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।

তৃতীয় রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা হচ্ছে ’৭৫-পরবর্তী একবার রাজাকার সমর্থিত সরকার, আরেকবার মুক্তিযোদ্ধা সমর্থিত সরকার। এই রাজনৈতিক মিউজিক্যাল চেয়ার খেলাটা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া, সমাপ্ত করাটাও একটি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।

আরেকটি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারাটা অব্যাহত রাখা। বাংলাদেশে সামরিক বা রাজাকার সমর্থিত সরকার আর কখনো গঠন করা হবে না— এই রাজনৈতিক গ্যারান্টি যদি আমরা দিতে পারি তাহলে সব রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আমরা সফলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারব।

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক আলোচনাগুলো চলছে, সেগুলোয় আপনি দেখবেন যে, অস্বাভাবিক সব প্রস্তাব তোলার মধ্য দিয়ে একটা বিভ্রান্তির জাল তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। রাজাকার, জঙ্গি চক্র তার পৃষ্ঠপোষকরা এখনো সাংবিধানিক ধারাটা বন্ধ করে দিয়ে, সংবিধানের বাইরে বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে চক্রান্ত করছে। অস্বাভাবিক একটা সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত করছে। সেজন্যই আমি এখনো মনে করি যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চক্রান্তের শক্তি, ষড়যন্ত্রের শক্তি এখনো সক্রিয়। তাই জঙ্গি দমনের যুদ্ধটাও আমাকে শক্তভাবে করতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের অজুহাতে জঙ্গি, খুনি, রাজাকার ও তার পৃষ্ঠপোষক বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি গং যেন গণতন্ত্রের লাইসেন্স না পায়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : তাহলে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টা পরিষ্কার হলো না...

হাসানুল হক ইনু : সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী আর সব দেশের মতো যে সরকার ক্ষমতায় আছে সে সরকারই নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করবে। যেমন ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা এ দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আমরা কি রাজনৈতিক, সামাজিক সব মিলিয়ে এখন একটা অস্থির সময় পার করছি বলে মনে করেন?

হাসানুল হক ইনু : আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখন রাজনৈতিকভাবে কিছুটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ পরিস্থিতি রয়েছে। আমরা সংবিধানের গণতান্ত্রিক পরিধির ভিতরে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম। আমরা আগুনযুদ্ধ মোকাবিলা করেছি। জঙ্গি পরিস্থিতিও মোকাবিলা করছি। সুতরাং যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জটা সরকার গুরুত্বসহকারেই নিয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আগামী নির্বাচনেও যদি বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়, অর্থাৎ ২০১৪ সালের মতোই যদি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে কি রাজনৈতিক দল ছাড়াই নির্বাচন হবে?

হাসানুল হক ইনু : সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। কেউ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তার দায়দায়িত্ব সেই দলকেই বহন করতে হবে, বহন করবে। নির্বাচন বর্জনের হুমকি যারা দেন বা দিচ্ছেন তারা কার্যত সাংবিধানিক পন্থা বানচালেরই হুমকি দিচ্ছেন। সবার অংশগ্রহণের যে ফতোয়া, তা রাজাকারদের, রাজাকার চক্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে হালাল করার একটা অপচেষ্টা মাত্র। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রে আগুনযুদ্ধ, রাজাকারতন্ত্র, হত্যা-খুনের রাজনীতি যায় না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ৫৭ ধারা নিয়ে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে। এই ধারায় সাংবাদিকরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এই বিতর্কের অবসানটা আসলে কীভাবে হবে?

হাসানুল হক ইনু : প্রথম কথা হচ্ছে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রসারিত ডিজিটাল জগতের একটা আপদ হিসেবে সাইবার অপরাধের বিচরণ শুরু হয়েছে। এ সাইবার অপরাধীদের আটকানোর জন্য, দমন করার জন্য আইন দরকার। ব্যবস্থা দরকার। সে লক্ষ্যেই ৫৭ ধারা বিদ্যমান রয়েছে। সরকার নতুন করে সমগ্র বিষয়টা মোকাবিলা করার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ করছে। এটি চূড়ান্ত হলে আমরা আশা করছি ৫৭ ধারা হয়তো আর দরকার হবে না।

সাইবার অপরাধ দমনের যে আইন সে আইনে গণমাধ্যমের কর্মীদের লেখার ও মত প্রকাশের সংবিধানসম্মত যে স্বাধীনতা আছে তা অক্ষুণ্ন রেখে, নিশ্চিত করেই ডিজিটাল অ্যাক্ট ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যাতে সংবিধান-প্রদত্ত অধিকার সমুন্নত থাকে। আর সাংবাদিকরা বা গণমাধ্যমের কর্মীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারটা গভীরভাবে সরকার নতুন আইনে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখছেন। একটা বিষয় হচ্ছে, ৫৭ ধারা বা ডিজিটাল অ্যাক্ট কোনোটাই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনো আইন নয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রণীত কোনো আইন নয়। এটা সব নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। তবে গণমাধ্যমকর্মীসহ দেশবাসীকে একটা জায়গায় ঐকমত্যে থাকতে হবে যে, ডিজিটাল জগৎ যদি তৈরি করতে চান তাহলে ডিজিটাল সাইবার অপরাধীদের আটকাতেই হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওয়েজবোর্ড নিয়ে এখন আলোচনা সরব। সম্প্রতি ওয়েজবোর্ড নিয়ে অর্থমন্ত্রীর একটা বক্তব্যেও সাংবাদিক সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আসলে কবে নাগাদ ওয়েজবোর্ড হচ্ছে, মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নাম পাওয়া যাচ্ছে কিনা?

হাসানুল হক ইনু : সরকার ওয়েজবোর্ড দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বেশির ভাগ প্রতিনিধির নামও সংগ্রহ করেছে। সেই অর্থে তথ্য মন্ত্রণালয় ওয়েজবোর্ড গঠনের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে। শুধু মালিকদের প্রতিনিধি বাদ রয়েছে। আমরা আশা করছি, মালিকরা প্রতিনিধি দেবেন এবং একটা সুষ্ঠু ওয়েজবোর্ড গঠন করতে সহযোগিতা করবেন। যদি তারা না দেন সেই পরিস্থিতিতে আইন অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওয়েজবোর্ড নিয়ে সাংবাদিক নেতারা আপনার পদত্যাগ দাবি করেছেন।

হাসানুল হক ইনু : সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ওয়েজবোর্ড চান, না তথ্যমন্ত্রীর অদলবদল চান? আমি মনে করি, সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড দরকার এবং আমি সেই ওয়েজবোর্ড দেওয়ার পক্ষে আছি। বর্তমানে মালিকপক্ষের গড়িমসির বিষয় সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবহিত আছেন।

অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণার পর ৯৫ ভাগ পত্রিকা ওই রোয়েদাদ বাস্তবায়ন করে না। এ সমস্যার প্রতিকারের লক্ষ্যে সরকার গঠিত মনিটরিং কমিটিতে সরকার, মালিকপক্ষ এবং সাংবাদিক প্রতিনিধি আছেন। কেন রোয়েদাদ বাস্তবায়ন হয় না, কীভাবে সমস্যাটা সমাধান করা যায় তা গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সরকার এবং বিরোধী বিএনপিও সমানে আলোচনা-সমালোচনা করছে। এটা নিয়ে কি রাজনীতিটা বেশি হচ্ছে না?

হাসানুল হক ইনু : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সরকার কোনো রাজনীতি করছে না। বিএনপি রাজনীতি করছে। প্রধান বিচারপতি এ রায়ে কিছু অপ্রাসঙ্গিক, অনভিপ্রেত বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান। রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা যায়। তা নিয়ে যারা অহেতুক উত্তেজিত হয়ে পড়েন বা উল্লাস প্রকাশ করেন তারা কার্যত ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে উসকে দিচ্ছেন। এ রায় কোনো সাংবিধানিক সংকট, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেনি। সরকার পরিচালনায় কোনো অচলাবস্থাও সৃষ্টি করেনি এবং সরকার পরিবর্তনেরও কোনো কারণ ঘটায়নি।

এ রায়ের দুটি অংশ আছে। একটি হচ্ছে বিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত অংশ। আরেকটি অংশ হচ্ছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণ। প্রথমেই বলতে চাই যে, বিচারপরিতদের অপসারণ করার ষোড়শ সংশোধনীর তিন ধাপের প্রস্তাবটা বাতিল করে বিচারপতিদের দিয়ে কেবল বিচারপতিকে অপসারণ করার এক ধাপের প্রস্তাবটা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি এবং এ রায় গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা ষোড়শ সংশোধনীতে যে তিন ধাপের প্রস্তাব দিয়েছিলাম সে প্রস্তাব বিচারপতিদের জন্য আরও সম্মানজনক ছিল, আরও নিরাপদ ছিল। কারণ সংসদ এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি এখানে ভূমিকা রাখা এবং অভিযুক্ত বিচারপতির বিষয়টা তদন্ত করার দায়িত্বটা বিচারপতিদের ওপরই ন্যস্ত। ফলে কোনো সংসদ সদস্যই বিচারপতিদের অভিযোগটা তদন্তও করবেন না, তার ওপরে চূড়ান্ত রিপোর্টও তৈরি করবেন না। সুতরাং দোষগুলো দেখার এবং বিশ্লেষণ করার, দোষের ভালোমন্দসংক্রান্ত বিষয়টি বিচারপতিদের দ্বারা গঠিত একটা কমিটিই নিষ্পত্তি করবে। বিচারপতিরা যদি কোনো ভুল করেন তাহলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা সংসদ এবং মহামন্য রাষ্ট্রপতির দফতর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেটা শোধরানোর সুযোগ আছে। সুতরাং তিন ধাপের প্রস্তাবটা আমরা মনে করি বিচারপতিদের জন্য বেশি নিরাপদ। মনে রাখতে হবে, মহামান্য রাষ্ট্রপতিসহ সবাই জনগণের কাছে জবাবদিহি করার ব্যবস্থা সংবিধানে আছে। আমাদের তিন ধাপের প্রস্তাবেও বিচারপতিদের জবাবদিহিতা জনগণের তথা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে করার ব্যবস্থা ছিল। সুতরাং বিচারপতি দ্বারা বিচারপতি অপসারণ করার ওই এক ধাপের প্রস্তাবটা জনগণের কাছে জবাবদিহিতার যে বিধান তার লঙ্ঘন হয়।

বিচারপতিদের অপসারণ বিচার বিভাগের দুটি বিষয়। ১১৬ অনুচ্ছেদ ও ৯৪(৪) অনুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের এবং আদালতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিচারপতিদের এবং আদালতের স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে বিচারিক কার্যক্রমের ভিতরে কোনোরকম হস্তক্ষেপ চলবে না। আমাদের সরকার কখনো হস্তক্ষেপও করেনি। বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টা আদালত ও বিচারপতিদের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে জড়িত। সুতরাং বিচারপতিদের দায়বদ্ধতা ও বিচারপতিদের স্বাধীনতা দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। সেখানে বিচারপতিদের অপসারণ প্রক্রিয়াটা কী হবে? তা এক ধাপে হবে, না তিন ধাপে হবে? এই অপসারণটা বিচারপতি করবেন, না রাষ্ট্রপতি করবেন? নাকি সংসদ করবে? নাকি প্রত্যেকের সমন্বয়ের মাধ্যমে করা হবে— এগুলো নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে আদালত যখন বিষয়টা পরীক্ষা করছে, তখন পর্যবেক্ষণে এমনসব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে আনা হযেছে, যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা খেয়াল করেছি, এ পর্যবেক্ষণে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, সংসদ, সংসদ সদস্য এবং রাষ্ট্রের অন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ প্রসঙ্গে এমন সব মন্তব্য ও কটাক্ষ করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তির জাল বিস্তার করতে সাহায্য করেছে। আমরা মনে করি, সংসদকে খাটো করার, বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যে বক্তব্য ও পর্যবেক্ষণগুলো কার্যত ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের রাজনীতিকে উৎসাহিত করেছে। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে ১৯৭১, ’৭৫, ২১ আগস্টের খুনি চক্র, রাজাকার চক্র ও জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ দেশে একটা চক্রান্তের রাজনীতির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনো আগুনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, কখনো জঙ্গি-সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে, কখনো সংসদকে অকার্যকর করার মধ্য দিয়ে, কখনো নির্বাচন বানচাল করার মধ্য দিয়ে একটা অস্বাভাবিক সরকার, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ অপচেষ্টাকেই আমি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বলছি। এ অপচেষ্টা এখনো বন্ধ হয়নি, চলমান আছে। আমরা তাই বলি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে, রাজনীতির মাঠটাকে রাজাকার ও খুনিমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তখন মাননীয় প্রধান বিচারপতির এই অনভিপ্রেত পর্যবেক্ষণ ও এই উক্তিগুলো চক্রান্তের রাজনীতিকেই উৎসাহিত করে। পাকিস্তানপন্থার দিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়। মনে হচ্ছে, এসব উক্তির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানপন্থিদের পাতা ফাঁদে প্রধান বিচারপতি পা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি বলছেন প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানপন্থিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী? চলমান বিতর্কের সমাধান কী?

হাসানুল হক ইনু : ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এটা ভালো। এতে সবাই উপকৃত হচ্ছেন। সমৃদ্ধ হচ্ছেন। আলোচনা হচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক।

এ রায়ের পর সামনের পদক্ষেপকে আমি চারটা ভাগে দেখি। একটা হচ্ছে রায় ও পর্যবেক্ষণসমূহ পুনর্বিবেচনা ও সংশোধনের জন্য আইনি পদক্ষেপ। দুই. সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতিও ভূমিকা রাখতে পারেন। তিন. প্রধান বিচারপতি যিনি এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, তিনি নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বা পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আদালতের ভাবমূর্তি পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করতে পারেন বা বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারেন এবং চার নম্বর হচ্ছে সংসদ এ রায়ের ওপর আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ণয় করতে পারে।

আমি আরেকটা বিষয় বলতে চাই, আদালত বিচারকার্য করবে। কিন্তু কখনই রাজনৈতিক মঞ্চ বানাবে না। রাজনীতিতে নাক গলাবে না এবং বিচারপতিরা রাজনীতির দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হবেন না।

সর্বশেষ খবর