সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওআইসির সদস্যদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কাজাখস্তান সফররত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর বারংবার অত্যাচারের ফলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান  জানান রাষ্ট্রপতি।

গতকাল কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সংগঠন ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নাগরিকত্বের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠী অস্তিত্বের সংকট, নিষ্ঠুরতা এবং উত্খাতের শিকার। তিনি বলেন, হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশ এ সমস্যায় সরাসরি আক্রান্ত। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। সূত্র : বাসস ও বিডিনিউজ। আবদুল হামিদ বলেন, মিয়ানমারের এই সমস্যাকে এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজের ভূমি রাখাইনে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে ফিরে গিয়ে থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে আমি ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই। মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদদের একই নেটওয়ার্কের আওতায় কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদি কর্মসূচি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বিশ্বের মধ্যে মুসলমানদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নীতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, এই নীতির ফলে বাংলাদেশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। ওষুধ শিল্প ও বিকল্প ওষুধ ুৈরির ক্ষেত্রে আধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বাংলাদেশ ব্যবহার করছে। জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল শস্য উদ্ভাবন করেছে, পাটের জেনম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে। এ সময় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনেকেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই ধরনের সামর্থ্য রয়েছে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। সুনির্দিষ্ট প্রকল্পে দ্বিপক্ষীয়-যৌথ এবং অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমাদের কাজ করা দরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দারিদ্রবিমোচন এবং উন্নয়নের ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ সময় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজারবায়েভের সঙ্গে কিছু ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ প্রস্তাব তুলে ধরেন। গবেষণা ও উন্নয়নে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ উদ্যোগ; ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তির শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ; বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তাদের এক নেটওয়ার্কের আওতায় আনা ; বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা বিনিময়ের কর্মসূচি গ্রহণ; উদ্ভাবনের বাণিজ্যিক প্রয়োগে সহযোগিতা এবং চাকরির বাজার সৃষ্টিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি; উদ্ভাবন-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থায়নে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের মতো বিষয় রয়েছে তার এই ‘প্ল্যান অব অ্যাকশনে’। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজারবায়েভের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওআইসির সামিট চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন, ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিন বক্তব্য দেন। সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি হামিদ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আজ শেষদিন। রাষ্ট্রপতির আগামীকাল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর