বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মসজিদে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যা

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, কুতুপালং (কক্সবাজার) থেকে

লাম্বাবিল পাড়ি দিয়ে থাইংখালী ক্যাম্পে গত দুই দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছেন শিউলি বেগম নামে এক যুবতী। সাত দিনে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে শিলখালী থেকে দুধের শিশুকে নিয়ে বাংলাদেশে এক কাপড়ে অনুপ্রবেশ করেন তিনি। তবে তাকে হতে হয়েছে বিধবা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিতে তাকে হারাতে হয়েছে স্বামী ও আরেক সস্তানকে। কথা হয় শিউলীর মতো অনেকের সঙ্গে। তারা জানালেন মসজিদে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে রোহিঙ্গা হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটেছে মিয়ানমারে। গতকাল কথা হয় এই সদ্য বিধবা নারীর সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বার্মিজ ভাষায় জানালেন, ‘টুপি আর বাজু পরি অরে মুসলমানর বেশ ধরি মগ অলে আরারে ডাকি লই যাই। মসইদর ভিতর ঢুকাই। গুলি করি মারার পরে অইনদি পুরা দেয়।’ শুধু শিউলি বেগমই নন, শিলখালী গ্রাম থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা আরও অন্তত ১০ জন নারী ও পুরুষ রোহিঙ্গা এই অভিযোগ করেন। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, দক্ষিণ তুমব্রু, মেদি, রাইমংখালী, কোয়াইংচিবং, ঢেকিবুনিয়া গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার পেছনে আর্মিদের সহযোগিতা করেছে উগ্র বৌদ্ধরা। তাদের সঙ্গে স্থানীয় মগ এবং রাখাইনও ছিল। এ ছাড়া অন্য ধর্মের লোকেরাও ছিল। মেদি এলাকা থেকে আগত আবদুর রহীম নামে এক যুবক বলেন, তাদের মসজিদে যাওয়ার জন্য বড়ুয়ারা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে এলাকায় ডাকতে থাকে, মুসলমানদের কোনো ভয় নাই। আমরা সবাই নিরাপদে। সবাই মসজিদে আসুন। অপরিচিত এই ব্যক্তির ডাকে সাড়া দিয়ে এলাকার অনেক রোহিঙ্গাই মসজিদে যান। এরপর ওই বড়ুয়া বার্মিজ আর্মিকে খবর দেয়। তারা মুহূর্তেই মসজিদ ঘিরে ফেলে। গুলি করার পাশাপাশি চারদিক থেকে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়েছি ওই মসজিদে ৩০ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। আমি ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে কোনোমতে পালিয়ে আসতে সক্ষম হই। একই অভিযোগ করেন দক্ষিণ তুমব্রু থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা জালালউদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ। তিনি জানান, ‘রোহিঙ্গা মুসলিম বাদে অন্য সব ধর্মের লোকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে মিয়ানমারে। রোহিঙ্গাদের ধরিয়ে দিতে আর্মিদের সহযোগিতা করে তারা। উগ্র বৌদ্ধ ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র। তাদের বলা হয়, মুসলিম রোহিঙ্গাদের দেখা মাত্রই গুলি করে মেরে ফেলবি।’ এদিকে গতকালও শাহপরী দ্বীপের ওপারে মংডু রোহিঙ্গা পল্লীর নলবনিয়া, মেরুল্লাসহ কয়েকটি পাড়া জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হেলিকপ্টার থেকে যথারীতি দাহ্য পদার্থ ফেলা হয়। শাহপরী দ্বীপ থেকে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি লক্ষ্য করা গেছে।

সর্বশেষ খবর