শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতিসংঘের অধিবেশনে নজিরবিহীন সংকটের কথা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্র্রতিবেদক

রাখাইনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘের আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট প্র্রস্তাব জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্র্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি দাবি জানাবেন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার। আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব দেবেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলবেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এসব কথা জানান। কাল শনিবার বেলা ২টায় নিউইয়র্ক রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব আগামী ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ সংস্কারের পলিটিক্যাল ডিক্লারেশনের একটি বৈঠকে অংশ নেবেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেসও সেখানে বক্তব্য দেবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু বিষয়ে ওআইসির একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় সাম্প্রতিককালে রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার সরকারের সহিংসতা, নিপীড়ন এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তুলে ধরবেন এবং এ সমস্যার আশু সমাধানে মুসলিম উম্মাহ্র দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করবেন। সফরসঙ্গী হবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্র্রতিমন্ত্রী। এবারের সম্মেলনে শান্তিরক্ষা মিশনের সংস্কার নিয়ে বেশ কিছু বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এসব বৈঠকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তার অগ্রাধিকারভুক্ত বিষয়াবলি তুলে ধরার পাশাপাশি এসব বিষয়ের প্রাধান্য নিশ্চিত করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্র্রথমবারের মতো এক লাখ মার্কিন ডলার অনুদানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতার সময় ঘোষণা করবেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে বিবৃতি দিল সেটা বাংলাদেশ কীভাবে মূল্যায়ন করে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চাইছিলাম নিরাপত্তা পরিষদ এই পরিস্থিতিতে একটা অবস্থান তুলে ধরুক। সেদিক থেকে এই বিবৃতি সময়োপযোগী ও জোরালো বলে মনে করি আমরা। রাখাইনে চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সেখানকার বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল। মিয়ানমার এটি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি জানান, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দফতরের একজন মন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নিউইয়র্কে তার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ যেহেতু বিষয়টি সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়, তাই তিনি সু চির দফতরের ওই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, একাধিক  কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এবারের সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে মিয়ানমার হতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশ সীমান্তে ৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যেই প্রায় চার লাখ সে দেশের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এসব আশ্রয় প্রার্থীর বেশিরভাগই মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক। এর আগে প্রায় চার লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় যাদের বেশিরভাগই কক্সবাজারে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে। ফলে লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। আর এ সংকটাপন্ন মুহূর্তে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ তুলে ধরে তা সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে পেশ করা হবে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার সরকারের চলমান জাতিগত নির্মূল অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাব।

সর্বশেষ খবর