শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাসিনাকে ফোন সুষমার, মিয়ানমারকে চাপ ভারতের

রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠাল ত্রাণ

প্রতিদিন ডেস্ক

হাসিনাকে ফোন সুষমার, মিয়ানমারকে চাপ ভারতের

রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর পর গত রাত পৌনে ১০টার দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোন আসে বলে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম জানান। বিডিনিউজ। সুষমা স্বরাজকে উদ্ধৃত করে নজরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান, ভারতেরও একই অবস্থান।

তারা (মিয়ানমার) যেন তাদের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চাপ দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন উনি (সুষমা)।’ ‘ভারতের কথাও হলো, রোহিঙ্গাদের ওপর মারধর বন্ধ করতে হবে’, বলেন উপ-প্রেস সচিব।

রোহিঙ্গাদের জন্য এলো ভারতের ত্রাণ : বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করা বাংলাদেশের জন্য নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ সরকার এ বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা প্রশংসনীয়। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পাশে থাকবে ভারত।’ গতকাল রোহিঙ্গাদের  জন্য ভারতের ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ভারতের এই ত্রাণ বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে গতকাল বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রথম দফায় ৫৩ মেট্রিক টন ত্রাণ পাঠায় ভারত। দুপুরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ‘সি-১৭’ বিশেষ বিমানে করে এসব ত্রাণ এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দরের রানওয়েতে বাংলাদেশের পক্ষে ত্রাণগুলো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান শিকদার, বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির প্রমুখ। ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’ নামে প্রথম দফার এ ত্রাণ সহায়তায় আছে চাল, ডাল, বিস্কিট, নুডলস, লবণ, চিনি, সাবান, মশারি, গুঁড়ো দুধসহ বিভিন্ন পণ্য। রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো ত্রাণে বিভিন্ন পণ্য দিয়ে ১৫ কেজি করে প্যাকেট করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সাত হাজার টন ত্রাণ পাঠানো হবে ভারতের পক্ষ থেকে। শিগগিরই এসব ত্রাণসামগ্রী কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের দুঃসময়ের বন্ধু। যে কোনো প্রাকৃতিক-মানবিক বিপর্যয়ে ভারত বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পাশে ছিল। একাত্তরে মানবিক বিপর্যয়ের সময়ও ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিল। এখন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে, এ সময়ও ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে পাশে থাকার জন্য আমরা ভারত সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’ ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক এই শরণার্থীর ভার বহন করা বাংলাদেশের জন্য নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ সরকার এ বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা প্রশংসনীয়। ভারত সরকার বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টার সমর্থন করতে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি মহতী উদ্যোগ। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পাশে আছে এবং থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। বাংলাদেশের মতো বহুল জনসংখ্যার দেশে রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও বস্ত্র জোগান দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। বিষয়টি অনুধাবন করে ভারত সাত হাজার টন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। টানা ৪৮ ঘণ্টা কাজ করে ৫৩ টন পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো ভারতের বিশাখাপত্তম বন্দর থেকে জাহাজে ও বিমানে করে কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম আসবে।’

মরক্কোর ১৪ টন ত্রাণ : এর আগে সকালে মরক্কোর ১৪ টন ত্রাণসামগ্রী চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে এস পৌঁছায়। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৭০টি তাঁবু, এক হাজার কম্বল, ওষুধ, দুই টন গুঁড়ো দুধ, এক টন টেট্রেস ও চার টন চাল। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হাবিবুর রহমান এসব ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে মরক্কোর রাষ্ট্রদূত মো. মজিদ হালিম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ১২ টন ত্রাণ পাঠিয়েছিল।

ইউনিসেফের ত্রাণ কক্সবাজারের পথে : নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে পানি ও স্বাস্থ্য সরঞ্জামবাহী ইউনিসেফের ট্রাক কক্সবাজারের পথে রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ পাইপলাইনে রয়েছে বলে গতকাল জাতিসংঘের এই সংস্থার বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। জরুরি এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ডিটারজেন্ট পাউডার, সাবান, পানির পাত্র, ন্যাপি, পরিষ্কার রুমাল, তোয়ালে ও স্যান্ডাল। এ ছাড়া ইউনিসেফ পানি শোধন ও পরিবহনের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকে সহায়তা করছে এবং নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রেও সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে, যাদের ৬০ শতাংশ শিশু বলে ধারণা। আগামী চার মাস রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় ইউনিসেফ ৭৩ লাখ ডলার সাহায্য চেয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ত্রাণের প্রথম চালান দুবাই থেকে ঢাকায় পৌঁছেছে।

সর্বশেষ খবর