সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাহাড়ে সম্প্রীতি নষ্টের অপপ্রচার

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পাহাড়ে সম্প্রীতি নষ্টের অপপ্রচার

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ পার্বত্যাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের শরণার্থীদের প্রতি তাদের নিজ দেশে অত্যাচার ও বাংলাদেশে আগমনকে ঘিরে নানা প্রচার, অপপ্রচার, গুজব এবং সীমিত পর্যায়ের হিংসাত্মক ঘটনার কথা আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া মিয়ানমারের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং শরণার্থীদের সিংহভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী—বিষয়টাকে অহেতুকভাবে ধর্মগত সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব হিসেবে কোনো কোনো মহল থেকে অপব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে। এসবের অসংযত বহিঃপ্রকাশের ফলে সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে যাচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চলে বসবাতরত পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সে জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের বৈষম্যমূলক, হিংসাত্মক এবং মানবাধিকারবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’ গতকাল রাঙামাটি চাকমা রাজার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এসব কথা বলেন। দেবাশীষ রায় বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েক লাখ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুর মর্মান্তিক অবস্থায় বাংলাদেশে আগমনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া সরকারের ও দেশের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।’ তিনি বলেন, একটি সম্প্রদায়িক মহল দেশের বৌদ্ধদেরও রাখাইন রাজ্যের নিপীড়নের জন্য দায়ী করছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের সামরিক শাসনামলে নিপীড়নের শিকার শুধু মুসলিমরা নয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের শ্যান, রাখাইন, মোন, ক্যারেনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নর-নারীও অত্যাচার-বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ১৯৩০, ১৯৪৪-৪৫ ও ১৯৬২ সালের দিকে তাকালে দেখা যায়, তৎকালীন বার্মা থেকে ভারতীয় ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে হাজার হাজার মুসলিম, হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ দেশটি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। তাই বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে বাঙালি- উপজাতিসহ মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যেও যাতে সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয় সেদিকে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণে নির্দিষ্ট আশ্রয় শিবিরে রাখাও প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর