বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের সঙ্গে কী কথা হলো শেখ হাসিনার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ট্রাম্পের সঙ্গে কী কথা হলো শেখ হাসিনার

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সোমবার জাতিসংঘের সংস্কার বিষয়ে এক বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনা তাকে থামিয়েছিলেন কয়েক মিনিটের জন্য। তখনই কথা হয় তাদের। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল তা নিজেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো সহায়তা প্রত্যাশা করে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী গতকাল নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি তৎপর ছিলেন মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির বিষয়েও।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে সাংবাদিক মাইকেল নিকোলাস লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে এতে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। এমন এক অনুষ্ঠান শেষে ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দু-এক মিনিটের জন্য থামান শেখ হাসিনা। পরে শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেছেন, এ সময় তিনি (ট্রাম্প) শুধু জিজ্ঞাসা করলেন বাংলাদেশের কী খবর? জবাবে আমি বললাম খুব ভালো চলছে। কিন্তু একটিই সমস্যা। মিয়ানমার থেকে (বিপুলসংখ্যক) শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে।

কিন্তু শরণার্থী প্রসঙ্গে তিনি (ট্রাম্প) কোনো মন্তব্যই করলেন না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শরণার্থী ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান পরিষ্কার। তাই রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে তার কাছে সহায়তা চাওয়া অর্থহীন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে তারা কোনো শরণার্থী অনুমোদন করবে না। তাহলে তাদের কাছ থেকে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমি কী প্রত্যাশা করতে পারি। তিনি তো মানসিকতা পরিষ্কার করেছেনই। তাহলে আমি কেন তাকে আবার এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করব? বাংলাদেশ কোনো ধনী দেশ নয়। কিন্তু আমরা যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি তাহলে আরও ৫-৭ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারব।’

তবে এসব শরণার্থীকে যাতে ফেরত নিতে বাধ্য হয় এজন্য মিয়ানমারের ওপর আরও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উচিত এটা মেনে নেওয়া যে, এসব শরণার্থী তার দেশের মানুষ এবং তাদের দেশ মিয়ানমার। তাদের (মিয়ানমার সরকার) উচিত এদের ফেরত নেওয়া। শরণার্থীরা ভীষণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে শেখ হাসিনার এই কথোপকথন সম্পর্কে অবহিত নন হোয়াইট হাউসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তবে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে খুব বেশি আগ্রহ রয়েছে ট্রাম্পের। যদি এ ইস্যুটি সামনে আনা হয় তাহলে অবশ্যই তিনি তার সঙ্গে যুক্ত হবেন।’

ভারত বলল, রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা করেননি হাসিনা-সুষমা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল দুপুরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সংক্ষিপ্ত এ বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি সৌজন্য সাক্ষাতের চেয়েও বেশি ছিল। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এটা খুবই সংক্ষিপ্ত বৈঠক ছিল।’ এক ট্যুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক আদতে আমাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতিফলন।’

তবে কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভারত তার কূটনৈতিক অবস্থান থেকে এ ধরনের বক্তব্য দিলেও শেখ হাসিনার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের গত এক সপ্তাহে কয়েক দফায় কথা হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুতেই। বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথা বলার পর গত রবিবার আবুধাবি থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একই ফ্লাইটে নিউইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের করণীয় নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতেই এভাবে একই ফ্লাইটে যাওয়ার বিষয়টি ঠিক করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে ২৩ ও ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবেন সুষমা স্বরাজ।

শেখ হাসিনা-মাহমুদ আব্বাস বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের কক্ষে গতকাল সাক্ষাৎ করেন ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। বৈঠকের পর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিন সংকটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকার তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি একটি দুর্যোগ। সর্বত্রই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে।’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু মানবিক গুণ রয়েছে। তিনি বলেন, অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে বাংলাদেশে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। যদিও মিয়ানমারকে তাদের এসব নাগরিক ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনে এ সময় বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তৎপরতার কথাও প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাসকে জানান।

উল্টো দাবি পররাষ্ট্র সচিবের : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে কথোপকথনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানালেও উল্টো দাবি করেছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্কের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনা-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মিয়ানমার ইস্যুতে আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। অ্যান্ড উই উইল সি হাউ ইট ক্যান বি রিজলভড।’ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর