বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চাহিদা নেই তবু আমদানি দুই লাখ টন আতপ চাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতপ চালে দেশের সিংহভাগ মানুষের আগ্রহ না থাকলেও সরকার সেই চালই আমদানি করেছে। বরাবর সিদ্ধ চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষ খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) হওয়া আতপ চাল খুব একটা কিনছেন না। যে চাল মানুষ ঠেকায় পড়েও খেতে চাইছে না কেন সরকার সেই চাল সংগ্রহ করেছে সেটিই বোধগম্য নয় সংশ্লিষ্টদের।

খাদ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে দেশের হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর সরকার দ্রুত চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। যথারীতি খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতর দ্রুত চাল আমদানির জন্য ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের প্রতিনিধি দল ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফর করে সরকারের সঙ্গে সরকারের (জিটুজি) চুক্তির ভিত্তিতে চাল আনার চুক্তি করে। এই দুই দেশ থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমদানি করা হয় আতপ চাল। অথচ দেশে আতপ চালের চাহিদা নেই বললেই চলে। সূত্র জানায়, খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন আতপ চাল আমদানির জন্য মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন। সচিবের পরামর্শকে অনেকেই এখন রহস্যজনক বলে অভিহিত করছেন। কারণ ভিয়েতনামেই উৎপন্ন হয় প্রচুর সিদ্ধ চাল। এমনকি সরকার নতুন করে ভিয়েতনামের সঙ্গে যে চুক্তি করতে যাচ্ছে সেই চুক্তি অনুযায়ী সিদ্ধ চাল আমদানি করবে। তাছাড়া এখন যে চাল ভিয়েতনাম থেকে এসেছে সেখানেও ৫০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, আতপ চাল আমদানি করা হলো কার উপকার করার জন্য? অবশ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দাবি করছে, ওই সময়ে ভিয়েতনামে পর্যাপ্ত সিদ্ধ চাল ছিল না। এ কারণে আতপ চাল আমদানি করতে হয়েছে। এদিকে রবিবার থেকে বাজারে ওএমএস চালু হলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ডিলাররাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না আতপ চাল বিক্রিতে। জানা গেছে, সরকার ভিয়েতনাম থেকে প্রথম দফায় যে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি করে তার মধ্যে দুই লাখ টনই হচ্ছে আতপ চাল। বাকি ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল। ইতিমধ্যে এই চালের বড় অংশই দেশে চলে এসেছে। সূত্র জানায়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও অন্তত দুই লাখ টন সিদ্ধ চাল ভিয়েতনাম থেকে আমদানির জন্য শিগগির চুক্তি করবে সরকার। অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, আতপ চাল সিদ্ধ চালের চেয়ে অনেক অনেক গুণ ভালো। প্রথম দিকে এই চাল ক্রয়ে লোকজন আগ্রহ না দেখালেও আগামী আট-দশ দিনের মধ্যেই এই চাল ক্রয়ের হিড়িক পড়বে বলে মনে করছেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, লাইন ধরে এই চালই মানুষ কিনবে। এদিকে দেশে যেখানে সিদ্ধ চালের চাহিদা সেখানে কেন আতপ চাল ক্রয় করা হয়েছে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘কোন চাল কী জন্য আমদানি করা হয়েছে তা আপনাকে বলতে হবে কেন? আর কখনো ফোন দেবেন না’ বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।

সর্বশেষ খবর