বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রধান বিচারপতির প্লট অনিয়মে আইনের শাসন কোথায়

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রধান বিচারপতির প্লট অনিয়মে আইনের শাসন কোথায়

মতিয়া চৌধুরীর প্রশ্ন

‘প্রধান বিচারপতি ও তার ভাইয়ের প্লট নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছে সেখানে আইনের শাসন কোথায়?’ এ প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রধান বিচারপতির বক্তব্য সম্পর্কে সচিবালয়ে মন্ত্রীর দফতরে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় কৃষিমন্ত্রী এ অভিমত ব্যক্ত করেন। কানাডা সফররত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা শুক্রবার টরেন্টো এয়ারপোর্টে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন পেলেই তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সবকিছু করা হবে। কারণ, আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই।’ এনআরবি নিউজ পরিবেশিত সংবাদটি শুধু বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হয়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বলতে চাই, মাননীয় প্রধান বিচারপতি বিশেষ বিবেচনায় ২০০৩ সালে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে ৩ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়ে ২০০৪ সালে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ৩ কাঠার প্লটকে ৫ কাঠায় রূপান্তর করেন এবং প্লটের স্থান পরিবর্তন করে ১৫ নম্বর সেক্টর থেকে ১০ নম্বর সেক্টরে নেন। সেই প্লটে তিনি ছয় তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু গত বছর নভেম্বরে দাখিল করা সম্পদের বিবরণীতে তিনি এ বাড়িটি উল্লেখ করেননি। যদিও গত জুলাইয়ে বাড়িটি বিক্রির জন্য একটি বায়নামানা করা হয়েছে।’ মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘২০১১ সালের আগস্টে মাননীয় প্রধান বিচারপতির ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা সংরক্ষিত কোটায় ৩ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পেয়ে পরে ৫ কাঠায় রূপান্তর করেন এবং প্লটের স্থান বদলে পূর্বাচল থেকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে নেন। ভাইয়ের সেই জমি এখন তিনি তার নিজের বলে দেখিয়েছেন আয়কর রিটার্নে। তা ছাড়া রিটার্নে বাড়িটি ছয় তলা উল্লেখ করা হলেও সেটি নির্মিত হচ্ছে নয় তলা।’ কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির নামে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার ঋণ অ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি করে মোট ৪ কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করে ৯ নভেম্বর ওই ৪ কোটি টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কিন্তু এই টাকার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তার আয়কর রিটার্নে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আদেশে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার দুর্নীতি দমন কমিশনকে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে তদন্ত না করার জন্য পত্র দেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নাল আবেদীন অনেক বছর ধরে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যুদণ্ডসহ অনেক রায় প্রদান করেছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলে সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দুদকে এই পত্র প্রেরণের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল পদে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।’ এসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক যদি উপরোক্ত কর্মকাণ্ডগুলো করতেন তাহলে আইনের দৃষ্টিতে তার কী হতো? দুর্নীতি দমন কমিশন কী করত? বিচার বিভাগ কী করত?’

সর্বশেষ খবর