বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভুঁইফোড় সংগঠনের আত্মপ্রচারে রোহিঙ্গা ত্রাণে সর্বনাশ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, উখিয়া (কক্সাবাজার) থেকে

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির মানুষ আত্মপ্রচারে মেতে উঠেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা ‘নামসর্বস্ব’ সংগঠনের নামে ত্রাণ বিতরণ ও সেলফি এবং ভিডিও করে তা গণমাধ্যমে পাঠানো, এমনকি ইউটিউবে ছড়ানো হচ্ছে। আবার ব্যতিক্রমও যে ঘটছে না তা নয়। লাখ থেকে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করলেও তা প্রচারে অনীহাও রয়েছে কারও কারও। এমনকি দেশের রাজনীতি ভিন্ন ভিন্ন শিবিরে থাকলেও মানবিক দৃষ্টিতে সবাই ত্রাণ নিয়ে ছুটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। গত কয়েক দিন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ১০টি শরণার্থী ক্যাম্পে সরেজিমন ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

দেখা যায়, উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মহাসড়কে কয়েক দিন ধরে প্রায়ই যানজট লেগে থাকছে। এলাকার সাধারণ মানুষ জানান, ছোট ছোট সংগঠন বা ব্যক্তি উদ্যোগে             আসা অনেকেই কিছু পুরনো কাপড় রাস্তার ওপর থেকেই রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে ছুড়ে মারছে। এ কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা রাস্তায় ত্রাণের জন্য অবস্থান নেয়। এতেই শুরু হয় বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট। ওই সব ব্যক্তি বা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ত্রাণ গ্রহণের সময় রোহিঙ্গাদের দৌড়াদৌড়ি-ছোটাছুটি উপভোগ করে। কেউ কেউ ওই সব ছবি মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করে। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। এসব ত্রাণ নিতে গিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী গুরুতর আহতও হয়েছেন। এমনকি এর মধ্যে এক বৃদ্ধ মারাও গেছেন। গতকাল উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে একটি ট্রাকে করে কিছু কাপড় বিতরণ করে নামসর্বস্ব একটি ভুঁইফোড় সংগঠন। ট্রাকের ওপর মোট আটজন উপস্থিত ছিলেন। তারা চারজনই ছিলেন সেলফি তোলার কাজে ব্যস্ত। বাকিদের একজন নিজের মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছেন। আর তিনজন রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাপড় ছুড়ে দিচ্ছেন। নিচেও আরেকটি ব্যক্তিকে ওই ট্রাকের কাপড় বিতরণের চিত্র ভিডিওতে ধারণ করতে দেখা গেছে। থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশেই একটি বাস দাঁড়ানো ছিল। বাসের ভিতর থেকে ত্রাণ হিসেবে বিস্কুট ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানেও দেখা গেছে, নিচ থেকে দুজন ভিডিও ধারণ করছেন। গাড়ির সামনে ও পেছনে লেখা ‘নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে আমরা’। কেউ কেউ রোহিঙ্গা শিশু বা বৃদ্ধদের নিয়ে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সে ছবি নিজের ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে উখিয়া কোটবাজারের ব্যবসায়ী গফুর মিয়া চৌধুরী বলেন, যাদের ন্যূনতম বিবেচনাবোধ ও হিতাহিত জ্ঞান নেই তারাই এ ধরনের মানবিক কাজে এসে অমানবিক আত্মপ্রচারে মগ্ন হয়। প্রচারমুখী এ ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর