শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকার শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের।

ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটসের সিইও আজিজ আহমেদ, ওয়ালমার্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল ডাইক, ওআরবিআইএসের প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা (সিডিও), গভর্নমেন্ট রিলেশনস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস অফিসার টেমার ইউনিস, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি অ্যালিস জি ওয়েলস, স্কাইপাওয়ারের সিনিয়র পরিচালক মারিয়া বোরোবিয়েভা, পাওয়ারপ্যাকের রন সিকদার, এফইডিএকসের ডেভিড শর্ট, স্কট প্রাইস অব ওয়ালমার্ট ইন্টারন্যাশনালের জে প্রেয়র, কোকাকোলা পরিচালক মিসি ওয়েনস, শেভরন ম্যানেজার জে জে অঙ, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের চৌধুরী নাফেজ শরাফত, ডেনহাম ক্যাপিটালের সৌরভ আনন্দ, ম্যালারটি অ্যাসোসিয়েটসের রবার্ট ও ব্লেক (জেআর), ইলিস্কট ড্রিডগেজের পিটার বোওয়ি, মটোরোলা সলিউশনের রিচার্ড ব্রেচার, এপিআর এনার্জির জন চ্যাম্পিয়ন, উবার টেকনোলজির আশহাউনি চানপরা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। তিনি বলেন, এনুয়াল পার্টনারশিপ ডায়ালগ, টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর এবং এসব ফোরামে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। নিরাপত্তা, সামরিক ও কাউন্টার টেররিজম নিয়ে আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কের উচ্চতা নির্দেশ করে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর মোট ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, এতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। তবে এই সম্পর্ক সম্প্রসারণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু ক্ষেত্রে হোঁচট খাওয়ায় এই সম্ভাবনা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি পোশাকের ওপর অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ। তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত বেশির ভাগ দেশ বিভিন্ন অগ্রাধিকার স্কিমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। উচ্চ শুল্কের কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত এলডিসি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। এমনকি কিছু উন্নয়নশীল দেশ এজিওএর অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এক্ষেত্রে সব প্রতিযোগীকে সমতার সুযোগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশের অভিন্ন জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশের বয়স ৪০ বছরেরও কম এবং তাদের প্রতিযোগী মজুরিতে পাওয়া যায়। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তার সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই অতি উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে। এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আইন দ্বারা সুরক্ষিত। এ ছাড়া ট্যাক্স হলিডে, মেশিনারি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়, লভ্যাংশ ও মূলধন সম্পূর্ণ ফেরত নেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেখানে বিনিয়োগকারীরা একই স্থান থেকে সব ধরনের সেবা পাবেন। তিনি বলেন, বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপনে সব সুযোগ-সুবিধাসহ অর্ধডজনেরও বেশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) প্রস্তুত হয়েছে। দেশে দ্রুত নগরায়ণে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি ও মধ্যবিত্তের উত্থানে এটাই নির্দেশ করে যে এ দেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্য চীন, জাপান,ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ভোগ করে। এসব দেশে পণ্য রপ্তানি করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সহজতর করতে আমরা অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তি, বিশেষভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস এবং হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিক সার, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ, সিরামিক ও প্লাস্টিক পণ্য, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, পর্যটন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলি কমিউনিকেশন এবং হাইটেক শিল্পসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ আহ্বান করি।

এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। কারণ এ লক্ষ্যে সম্পদের জোগান দেওয়া সরকারগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঙ্কটাডের তথ্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতি বছর বিশ্বের ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘ক্রিয়েটিং অ্যা পলিসি ভিশন ফর এসডিজি ফিন্যান্স ফ্যাসিলিটেটিং প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য এসডিজি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশের জিডিপির ৬০ শতাংশ, পুুঁজি প্রবাহে ৮০ শতাংশ ও কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশ বেসরকারি খাতের আওতায়। এজন্য এসডিজি বাস্তবায়নে তাদের অংশগ্রহণ ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি খাত শক্তিশালী ও উৎসাহী অংশীদার হিসেবে বিকশিত হচ্ছে। তাদের এই আগ্রহের প্রেক্ষাপটে তার সরকার এসডিজির জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় বেশকিছু সংস্থা গঠন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এফডিআইর ওপর গুরুত্বারোপ করে বড় ধরনের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আগামী কয়েক বছরে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও তদারকি শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বক্তৃতাকালে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের উদ্ভাবন বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সর্বশেষ খবর