শিরোনাম
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের কথা বলবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক থেকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা প্রশ্নে সাংবাদিকদের বলেছেন, ওদের সঙ্গে আমাকে কেন বসতে হবে? আপনারা যারা আমাকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বসার কথা বলেন তারা কি একবার ভেবেছেন বিএনপি-জামায়াত খুনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি লুটেরাদের দল। লুট করাই তাদের কাজ, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি নয়।

জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছেই আমি জানতে চাই আপনার বাবা-মাকে যদি কেউ হত্যা করে, আপনি কি পারবেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে? তাহলে আমাকে কেন বারবার এই প্রশ্ন করেন? ডবএনপি-জামায়াতের প্রতি আপনাদের এত সহানুভুতি এলো কীভাবে? তিনি সাফ জানিয়ে দেন, আপনারা আর কখনো বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বসতে বলবেন না, তাদের ডাকতে বলবেন না। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জাবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দেশে ফিরে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে আপনার কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা বা বিএনপিকে সঙ্গে রাখবেন কিনা জানতে চেয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কেন, এ ব্যাপারে বিশ্ব জনমত গড়ে উঠেছে। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, এই দলটির নিজস্ব নীতি এবং আদর্শ আছে। জাতীয় ইস্যুতে তাদের ভূমিকা কি হবে সেটা তারা নির্ধারণ করবে। আমি তো আর বিএনপির নেতৃত্ব দিই না। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আমি বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, জবাবে তিনি কোন ভাষায় কথা বলেছেন, আপনারা জানেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুতে আমি সহানুভূতি জানাতে গুলশানে ছুটে গিয়েছিলাম। আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাড়ির সামনের গেট আটকে দেওয়া হয়। আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী, তারপরও এই অপমান হজম করেছি, আর নয়। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, খালেদা জিয়া হয়তো তার অতীত ভুলে গেছেন। তিনি আমাদের ৩২ নম্বর বাড়িতে মাসে অন্তত দুই দিন আসতেন। আমার বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রহণ করতে চাননি। যে জিয়াউর রহমানের পরিচয়ে তিনি পরিচিত, সেই পরিচয় হয়তো তিনি হারিয়ে ফেলতেন। কিন্তু আমার বাবাই তাকে সেই পরিচয় ফিরিয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো নির্বাচনই রাজনৈতিক দলের জন্য চ্যালেঞ্জ, এটিই স্বাভাবিক। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যে কোনো সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমি সেই জায়গা থেকে বলেছি, যেন কোনো খুনখারাবি না হয়, আগুন সন্ত্রাস বোমা হামলা না হয় আমি সেই উপলব্ধি থেকে বলেছি। এবং আগামী নির্বাচন আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের আপনি জনগণের মন জয় করতে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন- আপনি কি মনে করেন তারা জনগণের মন জয় করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে— ‘এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট পেতে হলে তো অবশ্যই জনগণের মন জয় করতে হবে। এজন্যই আমার এই নির্দেশ। এর পেছনে কোনো কিন্তু খোঁজার কারণ নেই।’ রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখায় নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো চাওয়া-পাওয়ার জন্য আমি রাজনীতি করি না। নোবেল জয়ের থেকে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় জয়ই আমার রাজনৈতিক সার্থকতা। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি যখনই দেশের মানুষের কাছে কিছু চেয়েছি তারা অকৃপণভাবে আমাকে তা দিয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যাপারেও আমি আহ্বান জানিয়েছি দেশের মানুষ সেই মানবিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আপনি কথা বলেছেন কিন্তুি তিনি আপনাকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী মৃদু হেসে বলেন, প্রশ্নটি তাকে করুন।

শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় ভবিষ্যতে কোনো স্থায়ী সংকট হবে কিনা জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে আমরা সবকিছু সামলাতে পারব। তিনি বলেন, যদি ১৬ কোটি মানুষের সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারি চার লাখ শরণার্থীর আশ্রয় কেন সমস্যা হবে। প্রয়োজনে আমরা দুই বেলা না খেয়ে এক বেলা খাব।

সর্বশেষ খবর