শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নোবেল শান্তি পুরস্কারের লড়াইয়ে ৩১৮ নাম

মনোনয়ন তালিকায় ২১৫ ব্যক্তি ও ১০৩ প্রতিষ্ঠান

জুলকার নাইন

আর মাত্র ১৪ দিন পর ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০১৭ সালের নোবেল প্রাইজ ফর পিস বা নোবেল শান্তি পুরস্কার। আগামী ৬ অক্টোবর নরওয়ের অসলো শহরে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় ঘোষিত হবে বিজয়ীর নাম। পরে ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠান আয়োজন করে নতুন বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার। ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জমা পড়া নমিনেশনগুলোর মধ্যে থেকেই বিজয়ী হবেন যে-কেউ। তবে এবারের তালিকা বিশাল। সর্বমোট ৩১৮ নাম উঠেছে এবারের মনোনয়ন তালিকায়। এর মধ্যে আছেন বিশ্বের ২১৫ জন ব্যক্তি ও ১০৩টি প্রতিষ্ঠান। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগে-পরে অন্যান্য শাখার পুরস্কার ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও বিশ্বজুড়ে আগ্রহ-আলোচনার কেন্দ্রে আছে পিস প্রাইজ। এবার বাংলাদেশেও আলোচনা হালে বাতাস পেয়েছে। সরকারি দলের সমর্থকদের একটি অংশ বলছে, মাত্র দুই সপ্তাহে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল শান্তি পুরস্কারের শক্তিশালী দাবিদার। ইতিমধ্যে নাকি নোবেল পুরস্কার কমিটির কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে শেখ হাসিনার নামও। অবশ্য কয়েক বছর ধরেই নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম থাকার কথা দাবি করে আসছেন দলীয় সমর্থকরা। মনোনয়নের তালিকায় নাম আছে কি না তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২০৬৭ সাল পর্যন্ত। কারণ নোবেল কমিটি ৫০ বছরের আগে বিজয়ী নাম ছাড়া সব তথ্য গোপন রাখে। নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, বিশ্বশান্তিতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবেদন পৌঁছেছে কমিটির কাছে। ৩১৮ প্রার্থীর প্রত্যেকের পক্ষে কেউ না কেউ কমিটির কাছে আবেদন করেছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ৩৭৬ প্রার্থী নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেটিই নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে কোনো শাখার জন্য সর্বোচ্চ আবেদন।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা বাংলাদেশি এক কূটনীতিক জানান, ৩১৮ আবেদন থাকলেও ইতিমধ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় সর্বোচ্চ ৩০টি নাম রাখে কমিটি। তিনি জানান, নোবেল কমিটি যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, তাতে ছয়টি ধাপ রয়েছে। প্রথমে সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয় মনোনয়ন তালিকার নাম সংগ্রহের কাজ। ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাম জমা নেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে জমা পড়া নামগুলো থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠানো হয় নোবেল কমিটিকে মতামত জানাতে বিশেষভাবে নির্ধারিত অ্যাডভাইজার বা উপদেষ্টাদের কাছে। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাস উপদেষ্টারা পর্যালোচনা করেন সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড। মতামত দেন পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যদের বিষয়ে। পরে কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে বৈঠক করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তবে একক কোনো ব্যক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে পাঁচ সদস্যের কমিটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। সে হিসেবেই নাম ঘোষণা হয় অক্টোবর মাসে। ডিসেম্বরে বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।

কারা আছেন তালিকায় : নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায় কারা আছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখে নোবেল কমিটি। কিন্তু এই মনোনয়নের জন্য প্রস্তাবকরা অনেক সময়ই তাদের প্রস্তাবিত নামের কথা জানিয়ে থাকেন। সে হিসেবে এবারের তালিকায় নাম আছে ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, মার্কিন গোপন তথ্য উন্মোচনকারী এডওয়ার্ড স্নোয়েডেন, কারাগারে থাকা সৌদি ব্লগার সাইফ বাদাউদি, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক, সিরিয়া যুদ্ধে জরুরি সেবা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইনের আশ্রয় নেওয়া সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (আইসিএলইউ)। তবে অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম মনোনয়ন তালিকায় প্রস্তাব করেছে ফ্রান্সের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেছেন একজন মার্কিন নাগরিক। ঢাকার একটি গণমাধ্যমে অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম যুক্তরাজ্যের দুজন অধ্যাপক প্রস্তাব করেছেন নোবেল কমিটিতে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তারা এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর