সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জোটের আসনে ভোটের প্রস্তুতি

রফিকুল ইসলাম রনি

জোটের আসনে ভোটের প্রস্তুতি

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের এক নম্বর সংসদীয় আসন পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজাহারুল হক প্রধান এমপি। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নিতে হয়। মূলত জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন রফার কারণে কপাল পুড়েছিল মজাহারুল হক প্রধানের। এ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জাতীয় পার্টির আবু সালেক ও মশাল মার্কা নিয়ে জাসদের নাজমুল হক প্রধান। এবার এই আসনে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক এমপি মজাহারুল হক প্রধান এমপি। এবার জোট প্রার্থীদের ছাড় দিতে নারাজ তিনি। একইভাবে সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ নুরুল ইসলাম। কিন্তু জোটের কারণে তাকে ছাড় দিতে হয়। ওই আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুত্ফুল্লাহ। এ আসনে এবার শেখ নুরুল ইসলাম জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। শুধু মজাহারুল হক প্রধান বা শেখ নুরুল ইসলামই নয়, বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ করতে জোটের প্রার্থীদের কারণে বঞ্চিত হওয়া নেতারা এবার ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরিক দল থেকে হওয়া এমপিরা অনেকেই নতুন মুখ। এলাকায়ও অপরিচিত। ঘটনাচক্রে কেউ কেউ এমপি হয়েছেন। জোটের কারণে ছাড় দিয়ে এমপি বানানো হলেও তারা এখন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক রাখছেন না। ফলে বঞ্চিত নেতারা এবার ছাড় না দিতে বদ্ধপরিকর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের এমপি ২৩৪ জন। আওয়ামী লীগের শরিক জোট ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, তরীকত ফেডারেশনের দুজন, জাতীয় পার্টি-জেপির দুজন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৩৪ জন, বিএনএফের একজন এবং স্বতন্ত্র ১৬ জন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ১৮ জন এমপি প্রথমবারের মতো নির্বাচিত। কেউ কেউ নির্বাচনী এলাকায় কোনো পদ-পদবিতেও নেই। আবার জোটের অন্য শরিকরা নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। প্রয়োজনেও কাছে পান না স্থানীয় এমপিকে। আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনে জোটের কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ছাড় দিলেও দল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এমপিরা নিজ নিজ দলকে শক্তিশালী এবং আওয়ামী লীগের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। কোনো কোনো এমপির ইন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তারা মামলাও করছেন। ক্ষমতা নির্ভরতা ও চাওয়া-পাওয়ার নীতিতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট এমপির দলে ভিড়ছেন বলে খবর রয়েছে।

ঢাকা-৪ আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তৎকালীন এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। কিন্তু দলের নির্দেশে তাকে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে থাকতে হয়। এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়। এখানে আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাবেক এপিএস ড. আওলাদ হোসেন। এবার এই আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ সানজিদা খানম ও ড. আওলাদ হোসেন। তারা নিয়মিত গণসংযোগ করে চলেছেন।

গত সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী করেনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। কিন্তু রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল এলাকার এই আসনটি এবার অন্য দলকে দিতে নারাজ দলটির নেতা-কর্মীরা। এ আসনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আওলাদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়সহ একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। একইভাবে গত দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য আসনটি প্রথমে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আবুল কালাম আজাদের পক্ষে ভোট করেন। কিন্তু এবার তারা দলীয় প্রার্থী চান ঢাকার ভিআইপি আসনে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন। বরিশাল-৩ আসনে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। জোটের কারণে বিগত নির্বাচনে ছাড় দিলেও এবার ছাড় দেবেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন একাধিকজনের নাম। এর মধ্যে যুবলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এমপি হন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এমএ আউয়াল। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জোর প্রচারণায় নামছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিক মাহমুদ পিন্টু ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান।

সর্বশেষ খবর