সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের ১৩ ট্রলার ৪৬ মাঝিমাল্লা আটকে আছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, টেকনাফ স্থলবন্দর ঘুরে

দীর্ঘ এক মাস ধরে টেকনাফের স্থলবন্দর সংলগ্ন নাফ নদে আটকে আছে মিয়ানমারের ১৩টি মালবাহী ট্রলার। অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে ট্রলারেই রাত কাটাতে হচ্ছে ৪৪ জন মাঝি-মাল্লাকে। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন ও তাদের ওপর নির্যাতন শুরু করার একদিন আগেই টেকনাফের স্থলবন্দরে আসে ট্রলারগুলো। পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় এরপর আর তারা যেতে পারেননি। এসব মাঝি-মাল্লার একজন বাদে সবাই রোহিঙ্গা মুসলমান।

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও জ্বালাও পোড়াও শুরু করলে রোহিঙ্গারা স্রোতের মতো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। এ সময় ট্রলারগুলোর মালিকপক্ষ রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লাদের মংদুতে যেতে নিষেধ করে। সেই থেকে ভয়ে আর ফিরে যাননি তারা। তাদের পরিবার পরিজন কোথায় আছে সেটাও নিশ্চিত করে জানেন না অনেকে। ট্রলারে খাদ্যসামগ্রী যা ছিল এবং তাদের হাতে যা নগদ অর্থ ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। গত ১৫/২০ দিন এসব রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে বলে জানালেন ভুক্তভোগী গুরা মিয়া মাঝি, হামিদ মাঝি ও আবদুল হাকিম মাঝি।

রবিবার টেকনাফ স্থলবন্দরে আটকে থাকা এই মাঝি-মাল্লাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মংদুর মগ ও রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন ১৩টি ট্রলার বাংলাদেশের আমদানিকারকদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। ২৪ আগস্ট তারা মংদু থেকে পণ্য বোঝাই করে টেকনাফে আসার পর ওপারে রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বিজিপি ও পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও তাণ্ডব। একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর। এ পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এলে তাদের ঠাঁই হয় শরণার্থী শিবিরে। সেখানে তাদের ত্রাণসহ অন্যান্য সহযোগিতা মিললেও এই ৪৪ মাঝি-মাল্লার কপালে জুটছে না  কোন কিছুই। তারা না পারছে এপারে শরণার্থী হতে, না পারছে ওপারে গিয়ে পরিবার পরিজনের খোঁজখবর নিতে। এদিকে গতকাল টেকনাফ স্থলবন্দরে নোঙর করা ট্রলারগুলোতে কথা হয় মোস্তাক মাঝি, হামিদ মাঝি, মোহাম্মদ ছালাম মাঝি, আবদুল হাকিম মাঝি, জোবায়ের মাঝি, জামাল মাঝি, নূরুল ইসলাম মাঝি, রফিক মাঝি, হোসেন আহমদ মাঝি, গুরা মিয়া মাঝি ও আহমদ হোসেন মাঝিসহ ১১ জন মাঝির সঙ্গে। অপর দুই মাঝি জিয়াউর রহমান ও হেমন্ত ধর উখিয়ার একটি শরণার্থী ক্যাম্পে তাদের বউ-ছেলেমেয়ে এসেছে— এই সংবাদ শুনে সেই ক্যাম্পে দেখতে যায়। কিন্তু গতকাল সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান  তারা।  ১৩টি ট্রলারের এই ১৩ জন মাঝি ছাড়াও রয়েছেন আরও ৩১ জন মাল্লা। তাদের প্রত্যেকের একই কথা— কখন এই পরিস্থিতি শান্ত হবে, কখন তারা তাদের ছেলেমেয়ে ও পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাবে? এই একটি চিন্তায় তারা অনেকটা অস্থির হয়ে পড়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি ট্রলার থেকে অনেক ভারী বস্তা কাঁধে নিয়ে নামছিলেন গুরা মিয়া মাঝি। বস্তায় কী জানতে চাইলে তিনি ছল ছল চোখে বলেন, ‘আমাদের হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই, কোনো খাবার দাবার নেই। এই পুরনো স্ক্র্যাপ লোহাগুলো বিক্রি কবে আর দুয়েকদিন হয়ত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব।’ এই দশা এখন আটকেপড়া ৪৪ জন মাঝি-মাল্লার। তারা এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে যেতে চান।

সর্বশেষ খবর