বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্ব প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশ এগোল সাত ধাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ভালো অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। গত বছরের ১০৬তম অবস্থান থেকে এবার ৭ ধাপ এগিয়ে ৯৯তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

এ ছাড়াও সুশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও সুশানের অভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে ডব্লিউইএফ ও সিপিডি। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল বিশ্বব্যাপী ১৩৭টি দেশে একযোগে প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। বাংলাদেশের হয়ে ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এটি প্রকাশ করেছে সিপিডি। ডব্লিউইএফ-এর এই প্রতিবেদনের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে শীর্ষে অবস্থান করছে সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর। শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে এরপর রয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, হংকং, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও জাপান। বিশ্বব্যাপী ১৩৭টি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। এর মধ্যে এই প্রথমবারের ১০০টি দেশের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অবকাঠামোসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে অতীতের চেয়ে ভালো করায় বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে ৭ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও এগিয়েছে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের শীর্ষস্থানীয় ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কোম্পানি দেশীয় মালিকানার। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে এ জরিপ কাজটি সম্পন্ন করা হয়। জরিপে ১২টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো অবকাঠামো, সামষ্টিক অর্থনীতি ও পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্য ও শ্রমবাজার দক্ষতা, আর্থিক বাজার উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, বাজারের আকার, উদ্ভাবনসহ আরও কয়েকটি বিষয়। এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি নিয়ে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অতীতের  চেয়ে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও এগিয়েছে। তবে একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকার জন্য দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবকে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এজন্য সিপিডির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে দুর্নীতি দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির। এ সময় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঠিক, কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার এ গতি আরও বাড়াতে হবে। কেননা বিশ্ব এখন দৌড়াচ্ছে। আর আমরা হাঁটছি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এটিও দেখছেন। বেশকিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলক এগিয়ে গেলেও এখনো দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার বিষয়টিও তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করছি। অথচ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জায়গায় স্থির রয়েছি। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা আগের চেয়ে ভালো করেছি। কিন্তু এ অগ্রগতির সঙ্গে শিক্ষা ও মানবসম্পদের গতির যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, অর্থনীতির গতির সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়নে তাল মেলাতে পারেনি। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে সরকারের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর