বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় ঋণ ভারতের, চুক্তি সই

৩৬ হাজার কোটি টাকায় বিদ্যুৎ সড়ক রেল বন্দরসহ ১৭ প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩৬ হাজার কোটি টাকায় বিদ্যুৎ সড়ক রেল বন্দরসহ ১৭ প্রকল্প

হোটেল সোনারগাঁওয়ে গতকাল ম্যাক্রো ইকোনমিতে ভারত সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বক্তব্য দেন অরুণ জেটলি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ভারতের সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। যা প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অরুণ জেটলির উপস্থিতিতে এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঋণের অর্থ দিয়ে বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক, জাহাজ চলাচল, সমুদ্রবন্দরসহ অবকাঠামো খাতে ১৭টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম ও ভারতের পক্ষে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এমডি ডেভিড রেসকুইনা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী ও ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  চলতি বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য এই ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর এবারের সফরে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলো। এটি এ যাবৎকালে কোনো দেশকে দেওয়া ভারত সরকারের সবচেয়ে বড় ঋণ। এর আগে আরও দুটি লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় মোট ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল ভারত। প্রথমবার ২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার আরও ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রথম ক্রেডিট লাইনের আওতায় ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। প্রথম দুটি লাইন অব ক্রেডিটের মতো এবারও এই ঋণের জন্য বছরে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে বাংলাদেশকে। ঋণ শোধে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছর সময় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হবে দশমিক ৫ শতাংশ হারে। চুক্তি সই হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে প্রকল্পভিত্তিক ঋণচুক্তি হবে। অর্থ ছাড় হবে এরপর। প্রস্তাবিত ঋণের অর্থে প্রকল্পের শতকরা ৭৫ ভাগ কেনাকাটা করতে হবে ভারত থেকে। বাকি ২৫ ভাগ জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ভারতের মনোনীত ঠিকাদারি কোম্পানি। ভারত সরকারের পক্ষে ঋণ দেবে সে দেশের এক্সিম ব্যাংক। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ঋণচুক্তির অর্থ ছাড়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রথম এলওসির কিছু অর্থ ছাড় হলেও দ্বিতীয় এলওসির অর্থ ছাড় হয়নি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রথম দিকের এলওসির অর্থ বিতরণ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অর্থ ছাড়ে সমস্যা হয়েছে। বর্তমান চুক্তির অর্থ খুব দ্রুত ছাড় করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুহিত। এ বিষয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় এলওসি ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে প্রকল্প নির্বাচনে ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা ছিল। নির্বাচিত প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা ছাড়াও স্থানীয় কিছু ইস্যু ছিল। এসব কারণে অর্থ ছাড়ে কিছু বিলম্ব ঘটেছে বলে জানান তিনি। তৃতীয় এলওসির অর্থে সম্ভাব্য যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হতে পারে তা হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও তীর সংরক্ষণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নতকরণ, বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ককে চারলেনে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রামে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ঈশ্বরদীতে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরি, মংলা বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রামে ড্রাই ডক নির্মাণ, মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত চারলেনে সড়ক উন্নীত করা, মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ১ লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর