বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
জৈবিক অণুর প্রতিচ্ছবি ধারণের কৌশল আবিষ্কার

রসায়নে নোবেল তিন বিজ্ঞানীর

প্রতিদিন ডেস্ক

রসায়নে নোবেল তিন বিজ্ঞানীর

জাক দিবোশে, ইওয়াখিম ফ্রাঙ্ক ও রিচার্ড হেন্ডারসন

প্রাণীদেহের রসায়নে একেবারে আণবিক পর্যায়ে এলে কী ঘটে, সেই ছবি ধারণ করতে সাইরো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপির উন্নয়ন ঘটিয়ে রসায়নের নোবেল জিতে নিয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মূলত জিকা ভাইরাস, আলজাইমার রোগের জীবাণুর গতি প্রকৃতি জানতে অগ্রগতি লাভ করেছে। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বুধবার এ পুরস্কারের জন্য সুইজারল্যান্ডের জাক দিবোশে, জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান ইওয়াখিম ফ্রাঙ্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড হেন্ডারসনের নাম ঘোষণা করে। একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আণবিক পর্যায়ে প্রাণ রসায়নের গবেষণায় এতদিন ফাঁক থেকে যেত কারণ বিদ্যমান প্রযুক্তি দিয়ে ওই পর্যায়ের ছবি পাওয়া সম্ভব ছিল না। সাইরো-ইলেকট্রন মাইক্রোসকপি তা সম্ভব করেছে। ‘গবেষকরা এখন কোষের আণবিক পর্যায়ের যে কোনো অবস্থার ছবি ধারণ করতে পারবেন, যা জীবনের মৌলিক রসায়ন বোঝার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’ আগে বিভিন্ন জৈবিক অণুর প্রতিচ্ছবি ধারণে রঞ্জক পদার্থ ব্যবহারসহ জটিল কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অণুগুলোর প্রকৃত আকার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে জানা যেত না। সাইরো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি এ ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখন এর মাধ্যমে আগের চেয়ে সহজ পন্থায় জৈবিক অণুর প্রায় পূর্ণাঙ্গ রূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিজ্ঞান সব সময়ই অদৃশ্য জগেক দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে তার পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হয়েছে। এত দিন ব্যবহার হয়ে আসা বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবদেহের আণবিক পর্যায়ের বহু কলকব্জার পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়া কঠিন ছিল। ফলে প্রাণরসায়নের একটি বড় ক্ষেত্র ছিল মূলত ধারণার ওপর। সাইরো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি ঠিক এ জায়গাটিকেই আমূল বদলে দিয়েছে। এ কৌশল ব্যবহার করে গবেষকরা এখন সহজেই গতিশীল যে কোনো জৈবিক অণুকে স্থবির করে দিতে পারবেন। আর নিতে পারবেন এমন সব কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি, যা এতদিন একেবারেই অদৃশ্য ছিল। এ কৌশল প্রাণ রসায়নের পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির গবেষণাকেও বহুলাংশে এগিয়ে নেবে। ১৯৯০ সালে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো একটি প্রোটিন অণুর ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি ধারণে সফল হন রিচার্ড হ্যান্ডারসন। আর এ সাফল্যই প্রাযুক্তিক সম্ভাব্যতাকে সামনে নিয়ে আসে। জোয়াকিম ফ্রাংকও এ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিসর বাড়ানোর কাজটি করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে তিনি এমন এক কৌশল উদ্ভাবন করেন, যার মাধ্যমে অস্পষ্ট দ্বিমাত্রিক একটি প্রতিচ্ছবি বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট ত্রিমাত্রিক কাঠামো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও তিনি ব্যবহার করেন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রযুক্তি। আর জ্যাকস ডুবোশেট এ প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করেন পানিকে। আগে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের শূন্যস্থানে থাকা পানির অণু সহজেই বাষ্পীভূত হতো, যা জৈবিক অণুকে ভেঙে ফেলত। কিন্তু ১৯৮০ সালে ডুবোশেট পানিকে খুব দ্রুত ঠাণ্ডা করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। এবার নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার এই তিন বিজ্ঞানী ভাগ করে নেবেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। আগামীকাল শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। আর সাহিত্য পুরস্কার কবে ঘোষণা করা হবে, সে তারিখ পরে জানানো হবে বলে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে। এএফপি, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর