শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হঠাৎ সিনহার বাড়িতে আইনমন্ত্রী

গেলেন সুপ্রিম কোর্টেও, সাক্ষাৎ করলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে । ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিলেন প্রধান বিচারপতি । অ্যাটর্নি জেনারেল বললেন, আর কোনো প্রশ্ন নেই । মওদুদ বললেন, প্রধান বিচারপতির সুস্থতা চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

হঠাৎ সিনহার বাড়িতে আইনমন্ত্রী

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গতকাল এসকে সিনহা। এর আগে বিকালে তার বাসভবনে যান আইনমন্ত্রী (ডানে) —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে দেখতে গতকাল বিকালে হঠাৎ করেই তার সরকারি বাসভবনে গিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আইনমন্ত্রী জানান, তিনি তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কুশল বিনিময় হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। অন্যদিকে এক মাসের ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গতকাল বিকালের দিকে আকস্মিকভাবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান। সেখানে তিনি লক্ষ্মীপূজায় অংশ নেন। মন্দির সূত্রে জানা গেছে, পূজা দিতে সস্ত্রীক তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং ২০ মিনিটের মতো ছিলেন। তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের তৃতীয় তলায় অফিসকক্ষে কিছুক্ষণ বসেন। এ সময় সেখানে ছিলেন আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত ও সুব্রত চৌধুরীও। এর আগে সকালে আইনজীবী সমিতির এক আরজির পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা আদালতে জানান, প্রধান বিচারপতি তার বাসায় আছেন এবং এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। এরপর দুপুরে আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় মন্ত্রী তাকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আর বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ক্যান্সারসহ শারীরিক নানাবিধ অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ২ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। তার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে সরকার এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন মহল থেকে নানারকম বক্তব্য আসছে। এর মধ্যেই ৪ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি সিনহা ক্যান্সারসহ শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য এক মাসের ছুটিতে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি ছুটির আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে সেই চিঠির কপিও সাংবাদিকদের দেখান এবং পড়ে শোনান আইনমন্ত্রী। তার পরও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কথা থামছে না। এ অবস্থায় গতকাল বিকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতিকে দেখতে তার ১৯ হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম এবং আধা ঘণ্টা তার সঙ্গে কাটিয়েছি। তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন।’ আপনাদের দুজনের মধ্যে কী কথা হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক খোঁজখবর নেওয়া ছাড়া সত্যি বলতে অন্য কোনো কথাই হয়নি। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। আবার কর্মস্থলে ফিরে আসুন।’ প্রধান বিচারপতি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন কিনা— জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এর আগে দুপুরে আইনমন্ত্রী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আইনমন্ত্রী তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সেখান থেকে বের হয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তার দায়িত্ব পালনে আমার সম্পূর্ণ সহযোগিতার কথা বলেছি। এর আগেও দুজন প্রধান বিচারপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তাদের বলেছিলাম যে আইন মন্ত্রণালয় হচ্ছে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের সেতুবন্ধ। সে কথা আজ আবারও বলেছি এবং সহযোগিতার কোনো কমতি হবে না, এটাও বলেছি।’

এর আগে সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী প্রধান বিচারপতির অবস্থা জানতে চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বাসায় আছেন এবং এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’ বুধবার বিকালে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে আইনজীবী সমিতি বিচারপতি সিনহার অবস্থা জানতে সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী সিনিয়র আইনজীবীরা গতকাল আপিল বিভাগে যান। সকালে আদালত বসার পর আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালতে যান। পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতির বিষয়টি আদালতকে বলেছি। আদালত যাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়, সেজন্য আমরা আবেদন করেছি। যেহেতু আমরা শুনেছি প্রধান বিচারপতি অসুস্থ, তাই এ অবস্থায় আমরা মনে করি, বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদের সেখানে যাওয়া দরকার। আদালত আমাদের কথা শুনেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আমাদের বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তাভাবনা করে আমাদের জানাবেন।’ মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই সংকটটি কোনো দলীয় সংকট নয়। দলমতনির্বিশেষে সবারই উদ্বেগ যে, আমাদের দেশের প্রধান বিচারপতি অসুস্থ আছেন। আমরা তার সুস্থতা চাই।’

আর প্রশ্ন থাকতে পারে না : অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি প্রধান বিচারপতির বিষয়ে যে আবেদন করেছিলেন আদালত সে বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে যা বলেছেন তারপর আর প্রশ্ন থাকতে পারে না।’ প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে যাচ্ছেন— এমন গুঞ্জনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি তো এর আগে বহুবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন, কানাডায় গিয়েছেন। এখন উনি যাবেন কি যাবেন না তা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব বিষয়। এগুলো নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করাই ভালো।’ অন্যদিকে আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট মো. ওয়াজিউল্লাহ বলেন, ‘আদালতে আইনজীবী সমিতি যে আরজি জানিয়েছে, সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি এবং আরও কয়েকজন সদস্য একমত নই। আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদক একটি বিশেষ রাজনৈতক দলের উচ্চপদে আছেন। তাদের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। যেসব জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মিল আছে, তারাই একত্রে বসে মতবিনিময় করেছেন। এখানে বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বা বারের অন্য সদস্যদের কোনো মত নেই।’

আইনজীবী সমিতির সাক্ষাৎ : বিকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে সাক্ষাৎ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর