শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
মিয়ানমারে নতুন অভিযান

আবার রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কায় জাতিসংঘ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমার থেকে নতুন করে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গার ঢল নামার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোকক গতকাল জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে এখনো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়ে গেছে। আবারও তাদের ঢল নামলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত থাকতে চাই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

অপর বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এখনো রাখাইন থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে নতুন করে দ্বিগুণ শক্তিতে অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। জাতিসংঘের আশঙ্কা, বাংলাদেশে এরইমধ্যে থাকা ৯ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সেখানকার অবশিষ্ট ৩ লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখে দাঁড়াবে। মিয়ানমার সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পালিয়ে আসা শরণার্থীরা বলছেন, পশ্চিম রাখাইনে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ফের তাণ্ডব শুরু করেছে। তাদের তাড়িয়ে দিতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান দ্বিগুণ জোরদার করা হয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের সীমান্তে ছুটছেন হাজার হাজার মানুষ। বহু গ্রাম এখন একেবারেই জনমানবশূন্য।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরুর পর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

 টানা পাঁচ সপ্তাহ আশ্রয়প্রার্থীরা আসার পর কয়েকদিন ঢল কিছুটা থেমেছিল। তবে গত কয়েকদিনে তা আবারও বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। এদের মধ্যে পালিয়ে এসেছেন মংডুর বাসিন্দা রাশিদা বেগম। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাদের কয়েক সপ্তাহ ধরে বলছিল যে আমরা সেখানে থাকলে তারা নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু এরপর সেনারা এসে ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করে। তারা আমাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। শেষ পর্যন্ত আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে বাড়িতে আগুন  দেয়।’ এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী এখন আর কাউকে হত্যা করছে না, শুধু বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বাড়িঘরে আগুনের কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নয়, ত্রাণ দেবে মালয়েশিয়া : মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে রাজি নয় মালয়েশিয়া। গতকাল মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি জানিয়ে দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য কোনো সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের আগ্রহ মালয়েশিয়ার নেই। এ ছাড়া মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, সে কারণে  রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব সেদেশের ওপর বর্তায় না। কুয়ালালামপুরে জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাহিদ হামিদি বলেন, ‘শরণার্থীদের জন্য চুক্তিতে স্বাক্ষরের কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। তবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যে নীতিমালা রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মালয়েশিয়া সহযোগিতা দেবে।

আরও সাহায্যের পরিকল্পনায় আমিরাত : মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সহায়তার ওপর আবারও জোর দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ আল মাখতুম। গতকাল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার দুবাইয়ের ত্রাণ গিয়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশে। ১১, ১৩ ও ১৫ অক্টোবর আরও ত্রাণ পৌঁছাবে। এই সহায়তাগুলো ইউএনএইচসিআর, রেড ক্রিসেট, মেডসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ার্স, আইওএম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছাবে। এর মাঝে ২৭০ টন চাল পৌঁছেছে। এই ত্রাণ সরবরাহের জন্য শেখ মোহাম্মাদ তার ব্যক্তিগত বিমান ৭৪৭ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া সি১৩০ ও ৭৫৭ বিমানের মাধ্যমেও ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর আগেও শেখ মোহাম্মাদ দুটি বোয়িংয়ের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিলেন। সে সময় ছিল ৮ হাজার রোহিঙ্গার জন্য ২৪ হাজার তারপুলিন।

সর্বশেষ খবর