বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অসম্ভব : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। বরং এটি এখন আঞ্চলিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। যদিও এটি সমাধানের পুরো দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ প্রয়োগ না করলে মিয়ানমার এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে বলে মনে হয় না, মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়। বহুপক্ষীয়, আঞ্চলিক, দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এ সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারি ও সহযোগিতা ছাড়া মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী করা দুষ্কর হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিরাপত্তা বাহিনী ও সহযোগী চরমপন্থি জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র দলের নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও দমন-নিপীড়ন  রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়  নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় মাপের সমস্যা তৈরি করেছে। যদিও রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন নয়। ইতিপূর্বে ১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১২, ২০১৬ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু  রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছে। মিয়ানমারের বিগত সামরিক ও সেনা সমর্থিত সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের ধাপে ধাপে অধিকার বঞ্চিত করে ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। ১৯৮২ সালের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মিয়ানমার  রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের পথ রুদ্ধ করেছে। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা  চৌকিসমূহে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী মিয়ানমার সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইনের মংডু, রাথিডং ও বুথিডং এ ‘এরিয়া ক্লিয়ারেন্স’-এর নামে ব্যাপক অভিযান চালায়। এই কার্যক্রমের ঘোষিত উদ্দেশ্য ‘সন্ত্রাসী’দের মোকাবিলা হলেও, এর অন্তরালে বেসামরিক সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চলে। এই ধ্বংসযজ্ঞ এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ এখনো প্রতিদিন প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, মিয়ানমারকে মূল সমস্যার সমাধান করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৈষম্যের নীতির অবসান করতে হবে। তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দিতে হবে।

 রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অপপ্রচার, ধর্মীয় বিদ্বেষ, উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ প্রয়োগ না করলে মিয়ানমার মূল সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে বলে মনে হয় না। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের সুপারিশমালার পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন মূল সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্বিতীয় অংশ হলো বাংলাদেশ হতে  রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া। এ ব্যাপারেও মিয়ানমারকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেখানে  স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা পেলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে আগ্রহী হবে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের আংশিক ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব, মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও চাপ প্রশমিত করার কৌশল হতে পারে।

‘রোহিঙ্গা সংকট : বাংলাদেশ কৃর্তক গৃহীত পদক্ষেপ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক. বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ, বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর