বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনপিতে গ্রেফতার আতঙ্ক

বিক্ষোভে পুলিশি বাধা গুলি টিয়ার শেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিতে গ্রেফতার আতঙ্ক

জামায়াতে ইসলামীর আট শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অভিযানের পর আতঙ্ক চলছে দলের ভিতরে ও বাইরে। এর মধ্যে সামাজিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর কারণে জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপকে শনাক্ত করেছে বিভিন্ন সংস্থা। নতুন করে গুজব ছড়িয়ে সরকারকে অস্থির করার চেষ্টা করছে তারা। এদিকে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। তারা বলেছে, সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভে পুলিশি বাধা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, বিচ্ছিন্নভাবে আইনের শাসন বিঘ্নিত করায় এবং অনুমতি না থাকায় কিছু স্থানে বাধা দিলেও সংঘর্ষ হয়নি। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের পর্যুদস্ত করতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী অতিমাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের যে কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার চরমে উঠেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে দেশে একচ্ছত্র আধিপত্য বজার রাখতে চায় শাসকগোষ্ঠী। এ জন্য তারা কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই বরদাশত করতে পারছে না। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার পাশাপাশি গণগ্রেফতার চালাচ্ছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বিএনপি ঘোষিত সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা নগ্নভাবে হামলা চালিয়েছে। বেপরোয়া গুলিবর্ষণ আর বর্বরোচিত এ হামলায় অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল অবিলম্বে গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গতকালের এই হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর চলমান আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নিপীড়নেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। দমন-পীড়ন চালিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ এবং বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর ক্রমাগত জুলুম-নির্যাতনের ফলে দেশের মানুষ সর্বদা আতঙ্কিত জীবন-যাপন করছে। বর্তমান সরকারের অন্যায় ও জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভে পুলিশি বাধা-সংঘর্ষ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৪৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক আহত ও অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশি বাধার মুখে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা, গুলি, টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ করেন।

তিনি জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে। কলাবাগানে বিএনপির নির্বাহী সদস্য শেখ রবিউল আলমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ইকবাল হোসেন টিটুসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক, আশরাফ ফারুক হীরা, আরাফাত বিল্লাহ খান, সাজিদ হাসান বাবু, কাজী শহিদুল, ইমরান, রাকিবুল ইসলাম, ইয়াসিন ভূইয়া, যুবদলের শোয়েব খান, রানা, মনির, ওমর ফারুক, বাবু, আবু সাঈদ, শাকিল আহমদ ও সাজ্জাদ মিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জুয়েল, মো. সুজন, মোস্তাক, সাইদুল, সুমন, দুলাল, উজ্জল, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোল্লা  মোহাম্মদ শাখাওয়াত, মো. শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছে শাহজাহানপুর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বাদল ও নিউমার্কেট থানার রিংকু। বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোজাফফর আলম এবং সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ ইদ্রিশ আলী নিকারীকে আগের রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নোয়াখালীতে বিএনপি নেতা মো. পারভেজ, সোহেল, জাহিদ আলম বাপ্পি, ইয়াছিন, মহিউদ্দিন, বাবুল মেম্বার, কামাল উদ্দিন, মো. বাবলু, বাবু, অন্তর, কামরুল, সজীব, সোহেল, আবু তাহের মিঠু, মো. ফারুক, নোমান, জুয়েল, সামু, ইউছুফ, পাপ্পু, আবু সাদেক, জনি, বাবলু, বুলু, শামিম, রিয়াজুল ইসলাম, রাহাত, আকবর, নাসিম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল হাসান শামসুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং মিছিলে টিয়ার শেল, লাঠিচার্জ এবং গুলি চালিয়েছে। এতে ৩০ জনের অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) থানা বিএনপির নেতা মো. সিরাজুল ইসলামকে পুলিশ মিছিল থেকে গ্রেফতার করেছে এবং পুলিশের লাঠিচার্জ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলায় ২৫ জনের অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। রিজভী আহমেদ জানান, বরিশালে যুবদলের মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত ও সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লক্ষ্মীপুর জেলায় মিছিল থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ময়মনসিংহ উত্তর জেলার তারাকান্দায় পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জন আহত হন। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল আলম আশরাফ, ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খোকন, সজীব সিকদার ও আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবদল নেতা সোহেল আহমেদসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি জানান, গতকাল সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দলের নেতা-কর্মীরা। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বেলা ১১টার দিকে পুনরায় শহরের রশিদ কলোনি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্য ও ১৭ নেতা-কর্মী আহত হন। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরেরও ঘটনাও ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে জেলা যুবদলের সভাপতি মাহবুল আলম আলো ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি জসীম উদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। গাইবান্ধায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়। পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে নওগাঁ জেলা বিএনপির মিছিল। অন্যদিকে রাজশাহীতে মহানগর বিএনপির সভাপতি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।

প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে বিএনপি : কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির ঘটনাসহ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সম্পর্কে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে বিএনপি। সুস্থ প্রধান বিচারপতিকে কীভাবে অসুস্থ বানিয়ে বাধ্যতামূলক ও জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং ছুটির আবেদনের স্বাক্ষর কীভাবে জাল করা হয়েছে—বিএনপির পক্ষ থেকে এসবের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের ‘লেক শোর’ হোটেলে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কূটনীতিকদের কাছে প্রধান বিচারপতির বিষয়টি নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বৈঠক শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, কানাডা, সুইডেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ে, তুরস্ক, আরব আমিরাত, মরক্কো, ভিয়েতনাম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ ২৪টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।

বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কারণ আমরা মনে করি তিনি অসুস্থ নন।

সর্বশেষ খবর