শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংসদের আগে লড়াই ছয় সিটিতে

গোলাম রাব্বানী

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে লড়াই হবে ছয় সিটির ভোটের মাঠে। জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সবার নজর থাকছে ছয় সিটির ভোটের দিকে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটি নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। সিটি নির্বাচন নৌকা-ধানের শীষের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। জনগণের কাছে কোন প্রতীকের কেমন কদর তারও প্রমাণ হবে এ নির্বাচনে। তাই সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নে ব্যাপক হিসাব-নিকাশ করছে প্রধান দুই দল। সেই সঙ্গে দুই দলের শরিকদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা। ভোট টানার চেষ্টায় মরিয়া দুই দল।

এদিকে নির্বাচন কমিশনও সংসদের আগে ছয় সিটি নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ও জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়। তারাও সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে তারা। তবে তার আগে ছয় সিটি ও আটকে থাকা পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনও শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষ দিকে রংপুর সিটিতে ভোটের মাধ্যমে ছয় সিটির ভোট শুরু করতে চায় ইসি। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের ২১ বা ২৮ তারিখে ভোটের প্রাথমিক তারিখ রাখা হচ্ছে। তবে তফসিলের ওপর নির্ভর করছে ভোটের তারিখ। যেই তারিখে ভোট হোক ৪০-৪৫ দিন হাতে রেখেই তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। এ ছাড়া রংপুরের ভোটের দিন একই সঙ্গে ১২ পৌরসভা ও ৩৪ ইউনিয়ন পরিষদেও ভোট করার চিন্তা চলছে। অন্যদিকে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে গাজীপুর সিটিতে এবং জুনের মধ্যে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেটেও ভোটের প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। তবে গাজীপুরসহ পাঁচ সিটিতেও একসঙ্গে ভোট করার প্রস্তাব দিয়েছে ইসি সচিবালয়। ইসি সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিন বা দুই ধাপে ছয়টি সিটি করপোরেশনে ভোট করার লক্ষ্য ধরে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু করেছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন। দলভিত্তিক এই নির্বাচনে এ বছরের শেষ থেকে শুরু করে জুনের মধ্যে ভোট গ্রহণের লক্ষ্য ধরে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন বলে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব নির্বাচন শেষ করার লক্ষ্যে যথাসময়ে কাজ শুরু করা হবে। গাজীপুরের ভোটও মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি চার সিটি করপোরেশন এক দিনেই করা যেতে পারে আগের মতোই। ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের অগ্রাধিকারমূলক কাজের চাপ থাকবে; নভেম্বর-ডিসেম্বরে তফসিলের আয়োজন চলবে। সে ক্ষেত্রে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে ছয় সিটি নির্বাচনের প্রস্তাব থাকছে। তবে ছয় সিটির মধ্যে শুরুতে রংপুর সিটিতে ভোট দিতে চায় ইসি। এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে কবে নির্বাচন হবে তার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। রংপুর সিটির বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, আগামী নভেম্বরে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে চূড়ান্ত সময়সূচির সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন। ২০১২ সালের ডিসেম্বর রংপুরে, ২০১৩ সালের জুনে এক দিনে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট সিটি করপোরেশন এবং জুলাইয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট হয়েছে। সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কার্যকাল দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে ভোট করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ছয় সিটির নির্বাচনের দিনক্ষণ : রংপুর সিটি নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর। প্রথম সভা হয়েছে ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ, তাই এর ১৮০ দিন আগে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে গত ২০ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ১৮ মার্চের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। গাজীপুর সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের ৮ মার্চ থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। আগামী বছরের ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সিলেট সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের ১৩ মার্চ থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। আগামী বছরের ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। খুলনা সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের ৩০ মার্চ থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। আগামী বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। রাজশাহী সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর। আগামী বছরের ৯ এপ্রিলে থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। আগামী বছরের ৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। বরিশাল সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর। আগামী বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। আগামী বছরের ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর