শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কাল ইসিতে সংলাপ

এক গুচ্ছ প্রস্তাব দেবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

নির্বাচনের সাত দিন আগে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন চায় বিএনপি। দলটির মতে, নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনকালে সংসদ ভেঙে দেওয়া, বিতর্কিত ইভিএম পদ্ধতি না রাখা, ২০০৮ সালের আগের সীমানা নির্ধারণ কার্যকর করাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব তৈরি করছে বিএনপি। এমন অন্তত ১৬টি প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাচ্ছে বিএনপি। প্রস্তাবনায় প্রশাসনের সর্বস্তরে রদবদলে ইসির কার্যকর ভূমিকাও চায় দলটি। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) ‘ল ইনফোর্সিং এজেন্সি’ হিসেবে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করাসহ একাধিক বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাবও থাকবে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবেই নির্বাচন কমিশন সংলাপের জন্য সাত দফা ‘গাইড লাইন’ দিয়ে বিএনপিকে চিঠিও দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তবে আমাদের তো আশাবাদী হতে হবে। আমাদের পথ বের করতে হবে। পথ বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব। সবার অংশগ্রহণে আমরা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারি, সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হয় সেটাই প্রত্যাশা।’ সহায়ক সরকারের রূপরেখার প্রস্তাবনা কী নির্বাচন কমিশনে  দেবেন কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব না। আমরা তাদের ধারণাটা  দেব। দি পারসেপশন উইল বি গিবেন এবং আমরা এটা বলব যে, এটা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। রূপরেখাটা আমরা পরে দেব।’ জানা যায়, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ থাকতেও দিক নির্দেশনা থাকছে বিএনপির প্রস্তাবনায়। এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যপোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে হবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদেরও পরিবর্তন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জন প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। জানা যায়, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়োগে ৩ বছর আগে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত হতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে হবে। জানা যায়, নিয়ম রক্ষার্থে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ  নিচ্ছে বিএনপি। বর্তমান ইসি সরকারের নির্দেশনা বাইরে গিয়ে বিএনপির প্রস্তাবগুলো আমলে নেবে—এমনটা মনে করেন না বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ সংলাপ শুধুই লোক দেখানো। ইতিমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ—এটা শুধুই সংলাপ। তারা (ইসি) বলবেন আর শুনবেন। ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিও ইসির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। সিইসির এ বক্তব্যেই প্রমাণ করে, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। অতএব, সরকারের সুবিধা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন কমিশন আরেকটা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে এ কমিশনের কাছে বিএনপির তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশন বর্তমান সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের কথাবার্তাই বলে দেয়—এ কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছাই নেই। সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবে তারা নির্বাচন করবে। তারপরেও আমরা ইসির সংলাপে অংশ নেব। দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব তুলে ধরব। আমরা ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সে কথাই বলছেন বারবার। আমরা জানি, এ নির্বাচন কমিশন আমাদের কোনো প্রত্যাশাপূরণ করবে না। ইসির এ সংলাপে না গেলে  আওয়ামী লীগ সুযোগ নেবে। তারা বলতে থাকবে বিএনপি তো সংলাপে বিশ্বাস করে না। এ সুযোগটা সরকারকে দিতে চাই না, দেব না।’

সর্বশেষ খবর