শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আত্মহত্যার চেষ্টা করে ডিবির কাছ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জে আটক স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া ৭০ হাজার টাকা ফেরত পেতে এলাহি কাণ্ড ঘটিয়েছেন এক গৃহবধূ। টাকা নিয়ে তার স্বামী ইসহাককে ছেড়ে না দিয়ে উল্টো আদালতে পাঠায় ডিবি পুলিশ। নাছোরবান্দা স্ত্রী বিউটি গিয়ে হাজির হন কোর্ট প্রাঙ্গণে। আদালতপাড়ায় স্বামী ইসহাককে বহনকারী ডিবি পুলিশের মাইক্রোবাসের বাম্পারে বেঁধে ফেলেন নিজের ওড়না। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ডিবি পুলিশ আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে। টাকা ফেরত না দিলে আমি ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করব। বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় শহরের নতুন কোর্ট প্রাঙ্গণের এ ঘটনার ভিডিও চিত্র সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, কীভাবে বিউটি নামে ওই গৃহবধূ অভিনব প্রতিবাদ করে ডিবির কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ভিডিওটি সহাস্রধিকবার শেয়ার হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ বলছেন, ‘বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে পরিবহন ব্যবসায়ী আমার স্বামী ইসহাক বেপারিকে ৩১ হাজার টাকার জালনোটসহ ডিবি পুলিশের এসআই আসাদ, মোল্লা টুটুল ও এসআই আশরাফ আটক করেছে বলে আমাকে ফোন দিয়ে জানায়। রাতে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। দরকষাকষি করে দেড় লাখ চুক্তি হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি পুলিশ অফিসে গিয়ে ৭০ হাজার টাকা প্রদান করি। পরে তারা জানায়, আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বাকি টাকা না দেওয়ায় তার স্বামী ইসহাককে মাইক্রোবাসযোগে দুপুর তিনটার দিকে কোর্টে নিয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিউটি বেগম আদালতপাড়ায় ডিবি পুলিশের গাড়ির বাম্পারের সঙ্গে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি চিৎকার করে বলছেন, আমার দুই সন্তান। একটি কোলে। আরেকটির আজকে স্কুলে পরীক্ষা ছিল। ডিবির টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ছেলেটি পরীক্ষা দিতে পারে নাই। আমার স্বামীর কাছে কোনো জাল টাকা ছিল না। ডিবির এক এসআইয়ের কাছেই অতগুলো জাল টাকা ছিল। আমি সত্যি কথা বলায় হুমকি দেওয়া হয়েছে বেশি কথা বললে বড় মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। হয় আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হোক, না হলে আমার দেওয়া ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হোক। এসময় আইনজীবী ও উত্সুক লোকজন ডিবি পুলিশের গাড়ি ঘিরে ফেলে। তখন ডিবি পুলিশ বিউটি বেগমকে দ্রুত কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের রুমের দিকে নিয়ে যায়। এসময় সাংবাদিকরা যেতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে আসামির শ্যালিকা ঝুমা ইসলামের কাছে ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বিউটির এ ভিডিও ফেসবুকে হাজার বারের বেশি শেয়ার হয়েছে বিভিন্ন আইডি থেকে। এদিকে বিউটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে এবং কোনো অভিযোগ না করতে জেলা পুলিশের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ওই পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলছে। পুরো ঘটনায় জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা মদদ দিচ্ছেন বলে ওই পরিবারের অভিযোগ। এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর