শিরোনাম
রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অস্ত্র উঁচিয়ে রাজস্ব আদায় করতে চায় এনবিআর

করদাতাদের বিস্ময়

রুহুল আমিন রাসেল

নিরাপদে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে স্থায়ীভাবে নিজস্ব ‘আর্মড রেভিনিউ ফোর্স’ নামে অস্ত্রধারী একটি বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় করদাতারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রস্তাবটি দিয়েছে। অংশীজনদের ভাষ্য হলো— এনবিআরের হাতে অস্ত্র এলে তা খারাপ নজির হবে। এ প্রস্তাব মোটেই শুভ লক্ষণ নয়। করদাতারা ক্রিমিনাল নয়। তাদের সঙ্গে পুলিশি স্টাইলে আচরণ না করাই ভালো।

নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে এনবিআর বলেছে, ঝুঁকিপূর্ণ পদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সরবরাহ করা হবে। ডেপুটেশনে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সশস্ত্র ফোর্স গঠন করা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানো হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বা পার্টনারশিপ আরও জোরদার করবে এনবিআর। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এমন প্রস্তাব তোলাটা শুভ লক্ষণ নয়। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তার মতে, এমনিতেই মানুষ কর কর্মকর্তাদের ভয় পায়। তারপর যদি অস্ত্রধারী রাজস্ব কর্মকর্তা যান কর আদায় করতে, তখন করদাতার মনের অবস্থা কী হবে! এনবিআরের হাতে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি খারাপ নজির হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। বলেন, এনবিআর মাঝে মাঝে কী যে বলে আমরা বুঝি না। আগে বলেছে, র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে ভ্যাট আদায় করবে। এখন বলছে, নিজেরাই হাতে অস্ত্র নেবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এনফোর্সমেন্টের (আইন প্রয়োগ) নামে কর্মকর্তাদের হয়রানি বাড়ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করদাতাদের সঙ্গে পুলিশের স্টাইলে এনবিআরের এমন আচরণ না করাই ভালো। এনবিআর চাইলে তো পুলিশ পেতেই পারে। এমনিতেই পুলিশের জ্বালা। তার ওপর যদি রাজস্ব কর্মকর্তারাও অস্ত্রধারী পুলিশের আচরণ করেন, তাতে রাজস্ব আদায়ে সুফল আসবে না। সূত্র জানায়, এনবিআর নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী গড়ে তোলার প্রস্তাব নিয়ে ১০ অক্টোবর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে দেওয়া প্রস্তাবে— কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলতে গিয়ে ২০১৪ সাল থেকে চলতি ২০১৭ পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে ছয়টি এবং ১৯৯৬ সালে আয়কর বিভাগের উপকমিশনার রুহুল আমিনের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে উল্লেখযোগ্য ছয়টি ঘটনার মধ্যে ২০১৪ সালে এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেনের ওপর অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বেনাপোল, মোংলা কাস্টমস হাউস, ধানুয়া, কামালপুর, জামালপুর, বুড়িমারী, লক্ষ্মীপুর ভ্যাট ডিভিশনসহ বিভিন্ন স্থানে রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনা ঘটেছে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রস্তাবে এনবিআর আরও বলেছে, আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের তল্লাশি ও চোরাচালানবিরোধী কার্যক্রমে রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সময়ে সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা আরও ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠছে। এসব চলমান কার্যক্রম ধরে রাখা ও বেগবান করার স্বার্থে এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সক্ষমতা তৈরি করা প্রয়োজন। এনবিআরের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে ওই বৈঠকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসনাত বলেন, রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ঢালাওভাবে অস্ত্র সরবরাহ করা ঠিক হবে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একটি বিশেষ ফোর্স গঠনের ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশে এখনো সেই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। আমাদের তো সশস্ত্র ইউনিট নেই। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বজলুর করীম চৌধুরী বলেছেন, ফোর্স গঠনের সমস্যা অনেক। হামলা সবার ওপর হয়। যদি রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে হামলা হয়, তাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর