রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানুষ আইন হাতে নিচ্ছে : এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সারা দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সংকট, রোহিঙ্গা সংকট, খাদ্য সংকট, প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচার বিভাগসহ সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশে আইনের শাসন নেই বললেই চলে। তাই সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলানায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। যৌথসভা হলেও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতির কারণে জনসভায় রূপ নেয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই রাজধানী ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জাপা ও এর অঙ্গসংগঠন যুব সংহতি, ছাত্র সমাজের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রমনা এলাকায় জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে একটি বিরাট মিছিল রমনা পার্কের সামনে পৌঁছালে এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মীর আবদুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল আলম রুবেল, কাজী মামুন, এ কে এম আসরাফুজ্জামান খান, বিএনএ জোটের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মণি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু। এরশাদ বলেন, দেশ নাকি নিম্নমধ্যম আয়ের! অথচ শুক্রবার তিন টাকার ডিম কেনার জন্য রাজধানীতে যা ঘটল তা দেখে কী মনে হয়— এ দেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে? সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএনপি মাত্র ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে। এরমধ্যে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু জণগণের ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি এখনো বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল। এরশাদ বলেন, বিএনপি আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। তিনি দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ক্ষমতায় যেতে চাই। ক্ষমতা কেউ হাতে তুলে দেয় না। ক্ষমতা আদায় করে নিতে হয়। এ জন্য দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। এরশাদ বলেন, তোমরা আমার নয় বছরের শাসনামলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জণগণের কাছে তুলে ধর না। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা সেদিন আমার কর্মকাণ্ডের যে প্রশংসা করেছেন তাতে অভিভূত হয়েছি। তারা উচ্চ পদে থেকেও আমার প্রশংসা করেছেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এরশাদ বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার গেছে, তারা বাঙালি। সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যের পর মনে হয় না রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যাবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে এরশাদ বলেন, যতই কূটনৈতিক তত্পরতা চালান না কেন মনে হয় না তারা আর ফিরে যেতে পারবে। বেগম রওশন এরশাদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর পল্লীবন্ধু এরশাদ স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। জি এম কাদের বলেন, যারা দল থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলে গেছেন তারা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আবার অনেক পরীক্ষিত কর্মীও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে স্ট্যাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রাখতে হবে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে হলে এখন থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্র কমিটি গঠন করতে হবে। ভোট কেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখতে শক্তিশালী কর্মী বাহিনী তৈরি করতে হবে। সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, অধ্যাপক দোলোয়ার হোসেন, সোলায়মান আলম শেঠ, রত্না আমিন হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এম হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, আবুল কাশেম, এম এ মান্নান, যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, নাজমা আক্তার, ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান, ইসহাক ভূইয়া, সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, নুরুচ্ছাফা সরকার।

সর্বশেষ খবর