সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ চাই

প্রতিদিন ডেস্ক

মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ চাই

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই সরব ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী এমপি। গত শনিবার ব্রিটেনের লেবার লিস্ট নামের ওয়েব সাইটে ‘ব্রিটিশ এমপিস মাস্ট পাইল মোর প্রেশার অন বার্মা টু ইন্ড দ্য শেমফুল ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট রোহিঙ্গা’ শিরোনামে দীর্ঘ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে রুশনারা আলী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক অফিস মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্ভোগ নিয়ে সর্বশেষ রিপোর্ট পড়তে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা ছিল সুপরিকল্পিত, সুসমন্বিত ও সিস্টেমেটিক। এসব সহিংসতা ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য শুধু মিয়ানমারের জনগণকে তাড়িয়ে দেওয়া নয়, একই সঙ্গে তাদের বাড়িঘরে ফেরা প্রতিরোধ করা। ২৫ আগস্ট সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায় আরাকান  রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। তারপর থেকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে। সেনাবাহিনী আরসার হামলার জবাবে যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ চালিয়েছে— তা তো অনেক আগে থেকেই চালিয়ে আসছিল সেনাবাহিনী। ২০১৩ সালে আমি ওই  দেশটি সফরে যাই, সেখানে আমি দেখেছি ভয়াবহতা। যার জন্য এ সম্প্রদায়কে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। নারীদের ধর্ষণের, পরিবারের শিশু ও পুরুষ সদস্যদের হত্যার ঘটনা গা শিউরে ওঠার মতো। ২০১২ সালে ওই সহিংসতা সৃষ্টির পর রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবস্থা নাটকীয়ভাবে আরও খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে। গত বছর অক্টোবরে ৯ জন সীমান্তরক্ষীকে হত্যা করার পর ওই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় আবারও ভয়াবহ নৃশংস হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে। এ বছর আবার যখন আমি রাখাইন সফরে গেলাম, এবারও সেই একই দুর্বিষহ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করলাম। প্রত্যক্ষ করলাম তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণ কী। কয়েক মাস আগে রাখাইনে আরেক দফা হামলা হয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তখন ব্রিটিশ এমপিরা ও হাউস অব লর্ডসের সদস্যরা আগস্টে আরও সহিংসতার বিষয়ে মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলোর রিপোর্টের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দেয়। ৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে কমপক্ষে ১৭০ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সহিংসতার নিন্দা জানানো হয় এবং ব্রিটিশ সরকারের জরুরি ভিত্তিতে দুটি করণীয় জোর দিয়ে তুলে ধরা হয়। এর প্রথমটি ছিল, রোহিঙ্গা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক সামরিক হামলা বন্ধে যতটা সম্ভব তা করবেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এটা করতে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম, মিয়ানমারের সেনা নেতাদের বিরুদ্ধে আরও চাপ সৃষ্টি করতে। অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি দাঁড়িয়েছেন সেনাবাহিনীর পক্ষে। এটা গভীর হতাশাজনক। মিয়ানমারে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর নেতাদের ওপর তাই অধিকার চাপ সৃষ্টি করতে হবে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ বন্ধ করতে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ঘোষণা দিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যে প্রশিক্ষণ দেয় তা অবিলম্বে স্থগিত হবে। তিনি যথার্থই এ ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়।

সর্বশেষ খবর