মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিইসির বক্তব্য অনভিপ্রেত বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

সিইসির বক্তব্য অনভিপ্রেত বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগ

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে ‘জিয়ার হাতে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ পেয়েছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য অযাচিত, অপ্রাসঙ্গিক, অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য মনে করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে সিইসির বক্তব্য সম্পর্কে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সিইসি কে এম নূরুল হুদার বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দলের নেতারা। সাংবিধানিক পদে থেকে জিয়াউর রহমান ও বিএনপিকে প্রশংসায় ভাসানোয় আওয়ামী লীগের ভিতরে চলছে রক্তক্ষরণ। আগামীকাল বুধবার সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সিইসির কাছে এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইতে পারে বলে জানা গেছে।

সিইসির বক্তব্যকে শিষ্টাচার বিরোধী, সংবিধান লঙ্ঘন, পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী।

গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেননি। তিনি বলেছেন ভিতরে। আমরাও মিটিংয়ে যাব। তখন জানতে চাইব, তিনি আসলে কী বলেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে সরকার অনুগ্রহ নয়, নিরপেক্ষতা আশা করে। জিয়াউর রহমানের প্রশংসার বিষয়টি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কৌশল হতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি এখন খুশি খুশি। এই ভাবটা যেন নির্বাচন পর্যন্ত বজায় থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে আমাদের কথা বলা নিষেধ রয়েছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছি। তবে সাংবিধানিক পদে থেকে এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপিকে খুশি করার জন্য ‘গণতন্ত্রের হত্যাকারী ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী’-কে হিরো বানানো ঠিক হয়নি। জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেটা আদালতের রায়ে প্রমাণিত এবং এখনো সেই রায় বহাল রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জিয়াউর রহমান পাঁচ বছর কারফিউ দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। কারফিউ দিয়ে যখন দেশ চালায় তখন কোথায় গণতন্ত্র থাকে? আর সেই নেতাকে কীভাবে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবক্তা বলেন? তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নিজেই বলেছিলেন ‘রাজনীতিবিদদের জন্য আমি রাজনীতি কঠিন করে দেব’, তাকে কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলা হয়? নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত শুধু বেআইনি ঘোষণাই করেননি, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী ও অবৈধভাবে ক্ষমতায় দখলদার হিসেবে উল্লেখ করে পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় দিয়েছে। জিয়াউর রহমানের কৃতকর্মকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের এই ধরনের রায় বহাল থাকা অবস্থায় সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং অগ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া প্রকৃত সত্যের বহির্ভূত।

গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির মুখপাত্রের মতো কথা বলেছেন। তিনি এমন বক্তব্য রেখেছেন যা অসাংবিধানিক এবং অসত্য। ‘সিইসির এই বক্তব্যের কারণে তার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অবিলম্বে তিনি সিইসির বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিশ্চিতভাবেই বিএনপিকে খুশি করতে এবং বিএনপির ‘আস্থা’ অর্জনের জন্য এমন অযাচিত, অপ্রাসঙ্গিক স্তূতি করেছেন। কিন্তু এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি শুধু মিথ্যাচার করেননি, ইতিহাস বিকৃতি এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো দলকে তৈলমর্দন জরুরি নয়। সিইসি যেসব বক্তব্য রেখেছেন সেগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে মোটেও সম্পর্কিত নয়। বাংলাদেশের সংস্কৃতি হলো, নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য হয় আওয়ামী লীগকে গালি দিতে হবে অথবা বিএনপিকে প্রশংসা করতে হবে। এক শ্রেণির সুশীল ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর জাতির ওপর এই ভারসাম্য তত্ত্বের ভূত চাপিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে বাংলাদেশ একটি সহনীয় অবস্থার দিকে এসেছে। মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, তিনি (সিইসি) জিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলেছেন। জিয়া যদি বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা হন তাহলে জাতির পিতা কি গণতন্ত্রের হত্যাকারী? হুদার মতে গণতন্ত্রের ঘাতক কে ছিলেন? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে কি তাহলে হ্যাঁ-না ভোটের প্রহসন? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঘাতক, লুটেরা, গণহত্যাকারীদের রাজনীতির অধিকার? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে ক্যান্টনমেন্টে রাজনৈতিক দলের জন্মগ্রহণ? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে সামরিক পোশাক পরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল? তাহলে জনাব নূরুল হুদা কি নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন না— বলাই বাহুল্য। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিনীতভাবে জানাতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করার ফলে জিয়া একজন অবৈধ ক্ষমতা দখল করা স্বৈরশাসক ছাড়া আর কিছুই নন।

সর্বশেষ খবর