মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাদের সিদ্দিকী চান সিইসির পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাদের সিদ্দিকী চান সিইসির পদত্যাগ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সেই সঙ্গে ইসির সংলাপ বর্জন করেছে দলটি। এর আগে ইসির ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি এ কথা বলেন। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের পরদিন গতকাল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সংলাপ বর্জন ও পদত্যাগ দাবির ঘটনা ঘটল। ইসির ধারাবাহিক সংলাপের ৩৪তম দল ছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর  নেতৃত্বে ২৭ জনের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সিইসি কে এম নূরুল হুদা, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপ থেকে বের হয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। দেশে সবার সঙ্গে সমআচরণ করা উচিত। এটা আমাদের দেশে হয় না। তিনি বর্তমান ইসির সংলাপের উদ্যোগকে শুভ উদ্যোগ বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, অনেক আলোচনায় ইসির সঙ্গে একমত হয়েছি। তাতে মনে হয়েছে তারা হয়তো কিছু ভালো কাজ করতে পারেন। এরপর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে আমাদের বক্তব্য অব্যাহত রাখতে পারিনি। আমরা আলোচনা বয়কট করে চলে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘যখন বিএনপি এখানে (ইসিতে) আলোচনা করতে এসেছিল, বেশ সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সেই জন্য আমরা যথেষ্ট আশাবাদী হয়েছিলাম। আমাদের আলোচনাও ভালো হয়েছে এবং সবাই খুবই ভালো মানুষ।’ তিনি বলেন, আমরা আলোচনা বয়কট করেছি এই জন্য, ‘সিইসি (বিএনপির সংলাপে) টোটাল কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নয়, তিনি এককভাবে বলেছেন—জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। জিয়াউর রহমান যদি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে থাকেন, তাহলে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কেউ না কেউ হত্যা করেছিলেন।  সেই হত্যা করা, বাতিল করা, স্থগিত করা বা নির্বাসনে  দেওয়া গণতন্ত্রকে জিয়াউর রহমান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তার (সিইসি) এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নয়। সিইসি একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। সিইসি এ কথা বলতে পারেন না যে, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন আর শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। তাই আমি মনে করি সিইসির এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। তিনি একটা অত্যন্ত কঠিন বেহিসাবি কথা বলেছেন।’ কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশে যে লড়াই তা গণতন্ত্রের লড়াই।  সে লড়াই মানুষের অধিকারের লড়াই। সেই জন্য আমাদের ডাকা। এই আলোচনায় আমরা অংশগ্রহণ করলেও সেটাকে আমরা স্বীকার করতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘সিইসির এই বক্তব্যের আমি নিন্দা জানাচ্ছি। এই বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার আমি পদত্যাগ কামনা করছি।’ তিনি বলেন, ‘সিইসি একটা ছোট্ট ব্যাখ্যা করেছেন যে, যারা এসেছেন তাদেরই যেসব সুকর্ম আছে আমরা ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে সেগুলো বলার চেষ্টা করেছি। আমি ওইভাবে জিয়াউর রহমানের কথা বলেছি।’ কাদের সিদ্দিকী বলেন, সেটা একরকমের কথা। আর তিনি যদি ওয়েবসাইটের কথা উল্লেখ করে বলতেন, তাহলে তা সিইসির কথা হতো না।

মন্তব্য নেই সিইসির : গতকাল বিকাল ৩টায় সাম্যবাদী দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। সম্মেলন কক্ষে যাওয়ার সময় কাদের সিদ্দিকীর বিষয়ে সিইসির বক্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তবে একপর্যায়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন  কোনো কথা বলব না, পরে কথা বলব।

কাদের সিদ্দিকীর ১৮ দফা প্রস্তাব : সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বহাল, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস, ভোটের ১৫ দিন আগে সেনা  মোতায়েনসহ ১৮ দফা সুপারিশ করেছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এ ছাড়া সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে—নতুন দলের নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করা; সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম বাতিল করা; রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী একনাগাড়ে দুবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না; রাজনৈতিক দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদে একনাগাড়ে তিনবারের বেশি থাকতে পারবেন না; স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে ১ ভাগ ভোটারের সমর্থনের বিধান বাতিল করারও প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন চায় সাম্যবাদী দল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিদ্যমান সংসদীয় আসন বহাল, সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে মতসহ ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। মতবিনিময় শেষে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় সংসদ বিলুপ্তির কোনো প্রয়োজন নেই। নতুন আদমশুমারি প্রতিবেদন না থাকায় বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই একাদশ সংসদের ভোট করার দাবি জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও জামায়াতের প্রতিনিধিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও যাতে ভোট করতে না পারে সে বিধান করার সুপারিশ করেছে সাম্যবাদী দল। ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন দলের নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান দিলীপ বড়ুয়া। এ ছাড়া ইভিএম চালু, ইসির নিজস্ব জনবল নিয়োগ, স্বাধীন ইসি গঠন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার, না ভোট চালু, প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার বন্ধ, অনলাইনে মনোনয়ন ও নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদানসহ ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর