শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিয়ানমার সেনারা ইউরোপে নিষিদ্ধ

ঋণ স্থগিত বিশ্বব্যাংকের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ দেশটির জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ, আমন্ত্রণসহ সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপের ২৮টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল দুপুরে লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় কনভেনশন  সেন্টারে ইউরোপের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কোনো বিতর্ক ছাড়াই এ-সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন বা প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ইইউতে আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ এবং এর আগে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকলে সেগুলো স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ দমননীতিতে ব্যবহার করা যায় এমন কোনো অস্ত্র মিয়ানমারের কাছে বিক্রি না করার বিষয়ে ইইউ ব্যবস্থা নিয়েছে। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইউরোপীয় কাউন্সিল বাড়তি পদক্ষেপ নেবে। প্রস্তাবে আরও বলা আছে, যদি ইতিবাচক পরিস্থিতি দেখা যায় তবে তার প্রতি সমর্থন থাকবে ইইউর। ইইউয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তানীতি বিষয়ক হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ফেদেরিকা মগেরিনির সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির অর্থনীতি ও জ্বালানিবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল, বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রী দিদিয়ের রেনডার্স, বুলগেরিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইকাতেরিনা জাহারিয়েভা, ক্রোয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী মারিজা পেজচিনোভিচ বুরিক, চেক প্রজাতন্ত্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আইভো স্রামেক, ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেস স্যামুয়েলসেন, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ ইভস দিয়াঁ, এস্তেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেভন মাইকসের ছাড়াও স্পেন, ইতালি, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, হাঙ্গেরি ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মাল্টার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আয়ারল্যান্ড ও গ্রিসের স্থায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, স্থলমাইনের ব্যবহার, যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে রেজ্যুলেশনে বলা হয়, এটি গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা অবশ্যই অবিলম্বে থামাতে হবে।

রেজ্যুলেশনে বলা হয়, হত্যাসহ নির্বিচারে হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যখন এত বেশি লোক পালিয়ে আসে তখন বুঝতে হবে সংখ্যালঘুদের নিজেদের জায়গাজমি থেকে উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটি একটি পরিকল্পিত কার্যক্রম। এ জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শরণার্থীদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন। রেজ্যুলেশনে আরও বলা হয়, যেহেতু মানবিক সহায়তা সেখানে দেওয়া যাচ্ছে না এবং মিডিয়ার কোনো প্রবেশাধিকার নেই তাই সেখানে প্রকৃত প্রয়োজন কী সেটি মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনার জন্য মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রেজ্যুলেশনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসাও করা হয়। আগামী মাসে মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের পাশে রোহিঙ্গা বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনার ওপর জোর দিয়ে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখবে। এ ছাড়া আসিয়ান জোটভুক্ত ১০টি দেশের মধ্যে যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদার, তাদেরও এ বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয় রেজ্যুলেশনে।

ঋণ স্থগিত করল বিশ্বব্যাংক : মিয়ানমারের জন্য বরাদ্দ হওয়া ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। জাতিগত নিধনের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের নৃশংসতার কারণে এ ঋণ স্থগিত করা হয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। রাখাইন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন ঋণ অনুমোদনের জন্য নীতিমালার শর্তগুলো যাচাই করে বিশ্বব্যাংক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ঋণ পেতে হলে আরও কার্যকর অগ্রগতি দেখাতে হবে। এটিই ছিল গণতান্ত্রিক মিয়ানমারে বিশ্বব্যাংকের প্রথমবারের মতো আর্থিক সহায়তা এবং সেটিই স্থগিত হলো রোহিঙ্গা সংকটের কারণে। ঋণ স্থগিত করার ওই বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, ‘বিশ্বব্যাংক হলো সবাইকে নিয়ে বৈষম্যহীন সামাজ ও সবার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধামূলক মৌলিক নীতিগুলো বাস্তবায়নের প্রতি উৎসর্গিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও জোরপূর্বক তাদের বাস্তুচ্যুত করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ সড়ক, সব জাতিগোষ্ঠী, ধর্মের, বিশেষ করে রাখাইনের জাতিগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার জন্য উচ্চমাত্রার প্রকল্পে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করার বিষয় পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। জানা যায়, মিয়ানমারে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে মিয়ানমারে বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল। ১৮ আগস্ট মিয়ানমারে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইলেন গোল্ডস্টেন ও মিয়ানমারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নওয়ে নওয়ে উইন এ বিষয়ে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। সমন্বিতভাবে তারা মিয়ানমার সরকারকে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করছে। বড় আকারে এবং সবার জন্য মানবিক সহায়তায় সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দেশত্যাগী রোহিঙ্গাদের এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার পথ তৈরি করার আহ্বান জানাচ্ছে সংস্থাটি। ওদিকে পালিয়ে আসা কমপক্ষে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাংকের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। এতে সাড়া দিয়েছে তারা। বিশ্বব্যাংক বলেছে, সরকার ও যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য কর্মসূচি চালু করতে প্রস্তুত তারা।

সর্বশেষ খবর