মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিইসি ঐতিহাসিক সত্য বলেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিইসি ঐতিহাসিক সত্য বলেছেন

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। এটা কারও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, ঐতিহাসিক সত্য। একদলীয় বাকশাল থেকে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, এটাই ইতিহাস। এই সত্যকে সাময়িকভাবে বিকৃত করা যায় কিন্তু তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যারা এখন ক্ষমতায়, তারা ইতিহাসকে বিকৃতি করতে চায়। কিন্তু এগুলো ধোপে টিকেনি। আলটিমেটলি সত্য ইতিহাসই  উঠে আসে। সময়ের ব্যাপার মাত্র। সুতরাং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা যা বলেছেন—তা যথাসময়ে ঐতিহাসিক বক্তব্য বলেছেন।’

গতকাল বিকালে রাজধানীর বনানীতে হোটেল সেরিনার নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবারই একটা মৌলিক সততা থাকতে হবে। নইলে দেশকে নিয়ে এগোনো সম্ভব নয়। সিইসি যে পদে বসে আছেন, সেখানে তো সততা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সেটা ঐতিহাসিক, রাজনীতিক কিংবা সামাজিক যাই হোক। তার বাইরে গিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়।’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ করা—এটা পৃৃথিবীর কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। তাই নির্বাচন কমিশন উপলব্ধি করছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা জরুরি। তাই ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছেন। সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এটার প্রয়োজনও নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, গ্রহণযোগ্য, অংশীদারিত্ব ও নিরপেক্ষ হবে—এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে এটা নেই বলেই সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে। এটা নির্বাচন কমিশন অনুধাবন করে থাকলে তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। আংশিক সমাধান দিয়ে কোনো লাভ নেই। পূর্ণাঙ্গ সমাধান দিতে হবে—যদি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হয়।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক, গবেষণালব্ধ, চিন্তাশীল ও বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন। নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করেছে। তবে এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা জনগণ পর্যবেক্ষণ করবে। এটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসির প্রত্যাশারও প্রতিফলন ঘটবে। আমরা এই প্রস্তাবগুলো বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে দিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে জনগণের অনাস্থার কারণগুলো আমরা উপলব্ধি করেছি। গবেষণার মাধ্যমে প্রত্যেকটি কারণ বের করে এগুলো আমাদের প্রস্তাবনায় নিয়ে এসেছি। ইসিও বলেছে, এটি জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাবে। এটা আমরাও দেখতে চাই, সুষ্ঠু ও সবার অংশীদারিত্বে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় কি না। আমাদের চেয়ে ভালো কেউ প্রস্তাবনা দিলে সেটাও বিবেচনা নিতে পারে। তবে আমরা যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছি, সেগুলো জনগণেরই মনের কথা।’ তিনি বলেন, সরকার যদি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে বিশ্বাস করে, সমতায় বিশ্বাস করে, তাহলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এ নিয়ে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে এর আগেও সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। হঠাৎ করেই এই সরকার আরপিওতে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বাদ দিয়েছে। অতীতে যেসব জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী ছিল, সবগুলোই সুষ্ঠু হয়েছে। তাই সবাই চায়, সেনাবাহিনীও আরপিওতে থাকুক। তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে রাখা হোক। তাতে নির্বাচন সমস্যার অনেকাংশেই কমে যাবে। কারণ সেনাবাহিনীর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা রয়েছে। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের জন্যই জরুরি। সর্বশেষ কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করায় একটি সুষ্ঠু পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় সমস্যায় সবসময় সেনাবাহিনী ছিল, ভবিষ্যতেও থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি কতটুকু আশাবাদী এমন প্রশ্নে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে আশা নিরাশা নয়, প্রশ্ন হলো—তারা জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না। যদি তারা জনগণের প্রত্যাশা সুষ্ঠুভাবে পূরণ করতে পারে তাহলে তাদের জন্যই কল্যাণকর। যদি তা না পারে, তারা আবারও একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যায়, তাদের পরিণামও ভালো হবে না। তারাও নিজেদের কলঙ্কিত ইতিহাসে নাম লেখাবেন। এর দায়-দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। তবে বাংলাদেশের মানুষ সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন আর কেউ দেখতে চায় না।’

সর্বশেষ খবর