বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পয়েন্ট ধরে ব্যাখ্যা চাইবে আওয়ামী লীগ

আজ ইসির সংলাপে খোলামেলা কথা, জিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলার প্রসঙ্গ হতে পারে মূল ইস্যু

রফিকুল ইসলাম রনি

রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ নির্বাচন কমিশন-ইসির সঙ্গে সংলাপে বসবে আওয়ামী লীগ। এতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেবেন। সংলাপে তারা সিইসির বক্তব্যের পয়েন্ট ধরে ব্যাখ্যা চাইবেন। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদীয় আসন সীমানা, সেনা মোতায়েন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন—ইভিএম নিয়ে বিএনপি যেসব সুপারিশ করেছে, তার পাল্টা প্রস্তাব তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। ইসির এজেন্ডার বাইরে আলোচনার প্রধান ইস্যু হতে পারে ‘জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করেছেন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার—সিইসি কে এম নূরুল হুদার এই বক্তব্য। কমিশনের এখতিয়ারে নেই, এমন কাজের দায়িত্ব নেওয়া সম্পর্কেও আওয়ামী লীগ ইসিকে সতর্ক করবে। যে তিনজন সিনিয়র নেতা এই ইস্যুতে কথা বলবেন, তারা গত দুই দিন ধরে হোমওয়ার্ক করছেন। ইসির বক্তব্যের অডিও-ভিডিও সংগ্রহ করে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা ও শোনা হয়েছে। এ নিয়ে গণভবনে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকও হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কমপক্ষে ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নাম পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতিনিধি দলে থাকা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় তিনি অংশ নিচ্ছেন না। বেলা ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

গত রবিবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে প্রকৃত নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে।’ তাছাড়া তিনি বিএনপির কিছু উন্নয়নমূলক কাজের বর্ণনা দেন। সিইসির এই বক্তব্য সর্বত্র সমালোচনার ঝড় তোলে। আওয়ামী লীগের ভিতরেও রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তবে নির্বাচন কমিশনকে ‘বিরোধী পক্ষ’ না বানাতে তাত্ক্ষণিক দলের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিষয়টিকে নির্বাচন কমিশনের কৌশল হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আমরাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিব। সেখানে তিনি কী বলতে চেয়েছেন তা জানতে চাইব। সিইসিকে কম কথা বলার পরামর্শ দিয়ে গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনারা রেফারি, আপনাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। আপনারা সেটাই করুন। আর কথা কম বলেন। একজন কথা বেশি বলেছেন, দেখেছেন না কী হয়েছে? কথা বলার জন্য আমরা পলিটিশিয়ানরা আছি। তিনি বলেন, এটা একটা সাংবিধানিক পোস্ট। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ করব। সব দল যাতে নির্বাচনে আসে সেই ব্যবস্থা করতে বলব। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে সিইসির প্রতিটি বক্তব্যের পয়েন্ট ধরে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। জিয়াউর রহমানের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করছিলেন। সেটা আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত এবং ঐতিহাসিক সত্য। জিয়াউর রহমান ও বিএনপির প্রশংসা করতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিএনপি প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। কিন্তু ৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয় করণ করে যান। সিইসি সেদিন বলেছেন, বিএনপি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মেয়েদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক ও মেয়েদের বৃত্তির ব্যবস্থা করে। সে বিষয়টিও তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। একইভাবে আইন কমিশন-বিএনপি গঠন করেছেন—এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভুল তথ্য তুলে ধরেছেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আইন কমিশন গঠন করা হয়, তা তুলে ধরা হবে। সূত্রমতে, বিএনপির প্রস্তাবের বিপরীতে আওয়ামী লীগ ১১ দফা প্রস্তাব দেবে। এর মধ্যে অন্যতম সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। বর্তমান সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তনের বিরোধিতা করা হবে। কেবল আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলে এবং কমিশন একান্ত প্রয়োজন মনে করলে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। ই-ভোটিং করতে পারলে ভালো হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ থাকবে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে তিন লাখের বেশি ইভিএম যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব না হলে ‘টোকেন’ হিসেবে কিছু আসনে তা করার প্রস্তাব দেবে দলটি। আর সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় না আনা এবং এই বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার বিএনপির প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে আওয়ামী লীগ।

যা থাকছে প্রস্তাবে : আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে আরপিও এর বাংলা সংস্করণ, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার রোধে আইনের নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগ, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ও নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংস্থার অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারীদের নিয়োগ না দিয়ে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের সুপারিশ থাকবে। এ ছাড়া দেশি- বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সব গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, দায়িত্ব কর্ম এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া। পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রভিত্তিক তালিকা ছবি ও এনআইডিসহ নির্বাচনের অন্তত তিন দিন আগে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রদান করার কথা বলা হবে।

২২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে থাকছেন যারা : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২২ জনের প্রতিনিধি দলে আছেন— আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, এইচ টি ইমাম, রাশিদুল আলম, অ্যাম্বাসেডর জমির, ড. মসিউর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এইচ এন আশিকুর রহমান, হাছান মাহমুদ, আবদুস সোবহান গোলাপ, রিয়াজুল কবির কাওছার।

সর্বশেষ খবর