বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনএফ শেখ হাসিনার অধীনে, বিজেপি চায় সেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার চায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ। এ সরকারে নবম সংসদের বিএনপিসহ এমপিদের নিয়ে ‘টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী’র প্রস্তাব রেখেছে দলটি। এদিকে সংসদ নির্বাচনে ভোটের ১০ দিন আগে থেকে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন করে ভোট ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি—বিজেপি। গতকাল সকালে বিএনএফ ও বিকালে বিজেপি’র সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। দুই দলের সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকালের সংলাপে বিএনএফ সভাপতি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। সরকার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সুপারিশসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। বৈঠক শেষে দলটির সভাপতি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকালীন একটি সরকার থাকবে সেটা হবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে। পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখে দশম সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নবম সংসদের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে এক দশমাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের প্রস্তাব করেছি। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিএনপির কথাও বলেছি। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি, এলডিপি, বিজেপি থেকে ইচ্ছা করলে প্রধানমন্ত্রী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিতে পারেন। দলটির পাঁচটি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিশোধের রাজনীতির পরিবর্তে সমঝোতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে বার্ষিক আর্থিক সহযোগিতা (থোক বরাদ্দ) দেওয়ার ব্যাপারে কমিশনকে উদ্যোগ নেওয়া, নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অভিন্ন পোস্টার, মঞ্চ ব্যবস্থা করা ভোটারসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই না। ইসির অধীনে নির্বাচন হবে। তখনকার সময়ের সরকার নির্বাহী কাজে সহযোগিতা করবে। নির্বাচনে সব কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা ঠিক হবে না। ভোটের আগে সেনা চায় বিজেপি : সংসদ নির্বাচনে ভোটের ১০ দিন আগে থেকে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন করে ভোট ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি—বিজেপি। তবে নির্বাচনকালীন ভূমিকার কথা তুলে ধরে দলটি জানায়, সহায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোট করা কঠিন হয়ে পড়বে। গতকাল বিকালে ইসির সংলাপে দলটি পাঁচ দফা সুপারিশ করে। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সংলাপ শেষে আন্দালিব রহমান পার্থ জানান, আমাদের সঙ্গে সরকার দলের যে ক্রাইসিসটা সেটা পলিটিক্যাল ক্রাইসিস। এই নির্বাচন কমিশন সেটা ঠিক করার ক্ষমতা রাখে না বা এটা পলিটিক্যালি কারেক্টও না। কিন্তু আমরা চাচ্ছি ওনাদের টেকনিক্যাল যে পার্টগুলো, সেগুলোতে ওনারা কাজ করুন। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলটি কোনো দাবি না রাখলেও লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছে— যে রাজনৈতিক অবস্থা বিদ্যমান, সে পরিস্থিতিতে সহায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় সরকার ব্যতীত নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটি সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ এবং সর্ব সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা অনেকাংশে কঠিন হয়ে পড়বে। বিজেপির লিখিত পাঁচ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— ভোটের ১০ দিন আগে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন ও প্রশাসনে রদবদল করা, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা নিয়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, প্রবাসীদের ভোটদানের ব্যবস্থা করা, ইসির আস্থা অর্জন করা এবং হলফনামার পাশাপাশি অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। আজ বেলা ১১টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, কাল সকালে জাতীয় পার্টি-জেপি; বিকালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র সঙ্গে ইসির মতবিনিময় হওয়ার কথা। এরপর ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও বসবে ইসি।

সর্বশেষ খবর