বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া ব্যাপক শোডাউন বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া ব্যাপক শোডাউন বিএনপির

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে গাড়ি থেকে হাত নাড়েন বেগম খালেদা জিয়া। বিমানবন্দর সড়ক থেকে গতকাল তোলা —জয়ীতা রায়

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ তিন মাস পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বিকাল ৫টা ৭ মিনিটে আমিরাত এয়ারলাইনসের একটি বিমানে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এ সময় ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে শুভেচ্ছা জানান  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুলিশ সেখানে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের যেতে না দেওয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছে সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গাড়িতে থাকা খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বিমানবন্দরের বাইরে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফ্যাস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ সময় বেগম জিয়াও গাড়ি থেকে হাত নাড়িয়ে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দনের জবাব দেন। তবে বিএনপি প্রধানের ঢাকা ফেরাকে ঘিরে বিকাল ৩টা থেকে মহাখালী হতে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ছিল তীব্র যানজট। ৪টার পর থেকেই বিমানবন্দর থেকে মহাখালীমুখী সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে খালেদা জিয়াকে বহন করা গাড়িটি ধীরগতিতে বিমানবন্দর থেকে বাসায় পৌঁছে রাত ৮টার দিকে। সেখানে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। বিএনপি প্রধানের দেশে ফেরা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন গুঞ্জনও ছিল। তবে সব সন্দেহ আর গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বাসায় ফিরেন বেগম জিয়া। আজ তিনি রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে দুই মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন। গত ১৫ জুলাই লন্ডন গিয়েছিলেন বিএনপি প্রধান। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে কোরবানির ঈদ উদযাপন করেন তিনি। সেখানে অবস্থানকালে চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা করান বিএনপি প্রধান। এ ছাড়া দলের ভবিষ্যৎ, আগামী নির্বাচন নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে কথা হয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতার সঙ্গেও বিএনপি প্রধানের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের খবরও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কয়েকজন ব্রিটিশ এমপির সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে বলে জানা যায়। মঙ্গলবার মধ্যরাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানান তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান, মেয়ে জায়মা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শার্মিলা রহমান সিঁথি এবং তার দুই সন্তান। এ ছাড়া লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে ছুটে আসেন। এরপর খালেদা জিয়াকে বহন করা বিমানটি দুবাই এসে যাত্রাবিরতি করে। গতকাল সকাল ১২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তিনি। ঢাকা বিমানবন্দরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাস্তায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বিএনপি প্রধানকে শুভেচ্ছা জানান। দুপুর ২টার পর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের জেলা থেকে বিমানবন্দরমুখী স্রোত নামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের। বিকাল ৪টার দিকেই বিমানবন্দর থেকে মহাখালীমুখী একপাশ দখলে ছিল বিএনপি নেতা-কর্মীদের।

বিমানবন্দর থেকে বনানী রেল ক্রসিং পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে দলীয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। বিভিন্ন স্থানে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম ছাড়াও ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, কৃষক দল, জাসাসসহ বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের কারও কারও হাতের ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও রাজধানীর বাইরের ঢাকা জেলা, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকেও হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিমানবন্দর সড়কে লাইনে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়াকে অভিনন্দন জানান।  খালেদা জিয়ার ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল পুলিশ। বিমানবন্দরের ভিতরে আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য ছিল, বাইরেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিমানবন্দরের সামনে বেশকিছু জলকামান, প্রিজন ভ্যান ও রায়ট কার রাখা ছিল। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস। তারা অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সড়কের পাশে দাঁড়াতে বাধা দিয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দেশে ফিরছেন বলে দলের নেতা-কর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। অথচ পুলিশ কতভাবে তাদেরকে বাধা দিচ্ছে। পুলিশ সড়কে গণপরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা না আসতে পারে। আমাদের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে সরকার রাজনৈতিক মনোভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তিনি পরোয়ানাকে ভয় পান না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তিনি আদালতে গিয়ে জামিন নেবেন।’ মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে, যাতে বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভিনন্দনে জানাতে না পারে। এত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জনগণ দেশনেত্রীর আগমনে শুভেচ্ছা জানাতে প্রস্তুত।’ বিমানবন্দরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মীর মোহাম্মদ নাছির হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, লুত্ফর রহমান খান আজাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর