বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে চীন-রাশিয়া

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে চীন-রাশিয়া

এএইচ মাহমুদ আলী

মিয়ানমারের দুই মিত্র দেশ রাশিয়া ও চীনের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অবস্থানে পরিবর্তন দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাশিয়া কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন চেয়ে বক্তব্য দিয়েছে। চীন প্রতিবেদন বাস্তবায়নের কথা না বললেও তাদের বক্তব্যে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন  লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ওই ‘আরিয়া ফর্মুলা’ বৈঠক থেকে মিয়ানমারের প্রতি ফের আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ১৩ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদে অনানুষ্ঠানিক গোপনীয় বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। রাখাইনে আগস্টের শেষ সপ্তায় শুরু হওয়া সহিংসতা এখনো বন্ধ হয়নি বলে বৈঠকে তুলে ধরেন ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি। তার বক্তব্যে রাখাইন রাজ্যের ‘প্রকৃত চিত্র’ অনেকটাই উঠে আসে। বিশেষত সহিংসতা বন্ধের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না এবং (বাংলাদেশে) অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত নির্মম নির্যাতনের কথাও তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। বৈঠকে সহিংসতা বন্ধ ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে সে কথা কফি আনান তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করায় এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানোয় মিয়ানমারকে তিনি ধন্যবাদ দেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে, বিশেষত বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। ড. আনান এ বিষয়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন।

এ ছাড়া মিয়ানমারে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে রাখাইনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনি মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রবেশাধিকার প্রদানের আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, ‘আরিয়া ফর্মুলা সভা’ শেষে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি ফ্রান্স সহিংসতার এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ আখ্যায়িত করেছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত এবারের আরিয়া ফর্মুলা সভায় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ দেশ এবং অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র বলিভিয়া, মিসর, ইথিওপিয়া, ইতালি, জাপান, কাজাখস্তান, সেনেগাল, সুইডেন, ইউক্রেন ও উরুগুয়ে ছাড়াও আমন্ত্রিত হিসেবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইইউ, ওআইসি, ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ অংশ নেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনক্লস কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর