বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গৃহকর নিয়ে যা বললেন মেয়র নাছির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

গৃহকর নিয়ে যা বললেন মেয়র নাছির

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, বর্ধিত গৃহকরের কোনো নেতিবাচক প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না। এগুলো দিয়ে আওয়ামী লীগের ভোট হয় না। গতকাল নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছাত্তার মিলনায়তনে ‘সিটি করপোরেশনের অধিক্ষেত্রে ইমারত ও জমির পঞ্চবার্ষিক মূল্য নির্ধারণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে ‘বর্ধিত কর আগামী  নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কিনা’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘খোলাবাজারে ১৫ টাকার চাল ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল কি বাড়ছে না? সরকার ও মন্ত্রণালয় কি কম বোঝে? মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই গৃহকর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমিও আওয়ামী লীগ করি, দলের প্রতি আমারও দায়বদ্ধতা আছে।’ চসিকের পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে সর্বোচ্চ ১০ গুণ পর্যন্ত গৃহকর বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছেন নগরবাসী। এ নিয়ে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও এম মনজুর আলম কর সহনশীল পর্যায়ে রাখতে চিঠি দিয়েছেন। বিবৃতি দিয়েছেন সাবেক ২৩ কাউন্সিলর। তা ছাড়া বাড়িভাড়া নয়, আয়তন ও অবস্থানের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের দাবিতে কয়েকটি নাগরিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চসিকের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এ সময় চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান কর নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা। মেয়র বলেন, ‘গৃহকর নিয়ে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলমের চিঠির লিখিত জবাব দেব। তা ছাড়া এক্স কাউন্সিলর ফোরামের চিঠির জবাবও দেব। একেকজনের চিঠির বিষয় একেকরকম। তিন-চার দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়া হবে।’ আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক পুনর্মূল্যায়নে সর্বমোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে প্রস্তাবিত গৃহকর দাবি ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন ২৮ হাজার ৭০২ হোল্ডিংয়ের বিপরীতে গৃহকর দাবি ৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নতুন হোল্ডিং বাদে দাবির পরিমাণ হয় ৮০৪ কোটি টাকা। আগের মূল্যায়নে দাবি ছিল ২০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তাহলে কর দাবির পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে। তাও প্রাথমিক, চূড়ান্ত নয়। আপিলে চূড়ান্ত হবে। নগর পিতা বলেন, ‘নিয়মমতে আমি ২৭ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স ধার্য করতে পারি। কিন্তু তা না করে আমরা চসিক ১৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স, রেইট ধার্য করেছি নগরবাসীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে। আমি আইন তৈরি করিনি যে আমি সংশোধন করতে পারব।’ সিটি মেয়র বলেন, ‘গৃহকর নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ থাকলে তার জন্য আপিল বোর্ড আছে। সেখানে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করলে কর অনেক কমে আসবে। রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গৃহকর নিয়ে আপিলের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমার বিশ্বাস, রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্তে সবাই খুশি হবেন। ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের বিকল্প কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই।’

প্রতিনিয়তই চসিকের ব্যয় বাড়ছে উল্লেখ করে চসিক মেয়র বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বাবদ ব্যয় হয় ৭১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয় ১৯১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, সড়কবাতি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয় ১৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চসিক পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে ৪৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেসরকারি করদাতাদের অবদান এবং সরকারি বরাদ্দ মাত্র ৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর