শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত

সংলাপেই সব আশা করা ঠিক হবে না

— ড. তোফায়েল আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংলাপেই সব আশা করা ঠিক হবে না

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘এই সংলাপের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে, সেটা আশা করা  ঠিক হবে না। আমরা আশাও করছি না। তবে নির্বাচন কমিশন এই সংলাপের মাধ্যমে বুঝল, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়। রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি কথা বলে তাদের দাবিদাওয়াগুলো তুলে ধরেছে। এ পর্যন্ত যতগুলো দাবিদাওয়া এসেছে, সেগুলো নির্বাচন কমিশন দেখবে। এগুলো নিয়ে তারা একটি রিপোর্টও তৈরি করবে। এগুলো সবাই দেখবে। এখানেও ইতিবাচক অনেক দিক আছে।’ গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ড. তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে তিনটা দাবি আছে, যাতে তাদের অবস্থান ভিন্ন। এর একটা ইভিএম। নির্বাচন কমিশনের সেই ক্যাপাসিটি হয়নি, যাতে আগামী নির্বাচনে তারা ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে। সুতরাং ইভিএম ব্যবহার এমনিতেই হবে না। দাবি দিলেও হবে না, না দিলেও হবে না। আরেকটা হলো সীমানা নির্ধারণ। এ নিয়ে একটি আইন তৈরি হবে। সেই আইনের ভিত্তিতেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি তার অবস্থান তুলে ধরবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একটা মাঝামাঝি অবস্থানে যেতে পারে। এটা নিয়েও শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো দাবি থাকবে বলে মনে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটি হলো সেনাবাহিনী নিয়োগ। বিএনপি বলছে, সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামাতে। সেখানে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি বিপক্ষে বলেনি। তারা বলেছে, সেনা সম্পর্কিত আরপিওতে যেসব ধারা রয়েছে, সেখানে সেনাবাহিনীর কথা নেই। কিন্তু সেনাবাহিনী নামানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা সেনাবাহিনীকে কীভাবে নামাবে কিংবা না নামালে ব্যাখ্যাও দেবে। এখানে রাজনৈতিক দলের চাওয়া না চাওয়ার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে না। সুতরাং আমি মনে করি না, আওয়ামী লীগ-বিএনপির দাবি পরস্পরবিরোধী। এতে বড় ধরনের কোনো অসুবিধাও হবে না।’ ড. তোফায়েল বলেন, ‘বিএনপি বলেছে, সংসদ বাতিল করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকার তেমন কিছুই বলেনি। তারা বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে। এখানে বিএনপি যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলছে, সেখানে সরকার একপর্যায়ে সংসদ ভেঙে দিতেও পারে। এ নিয়ে সরকারের বেশি কিছু ঝুঁকি নেই। তিন মাস আগে শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে ছোট মন্ত্রিসভা হতে পারে। এটা মানতে আওয়ামী লীগের মনে হয় তেমন আপত্তি থাকবে না। তবে বিএনপির সহায়ক সরকারের রূপ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সেটা কি শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে হবে, নাকি তাকে রেখে হবে, তা এখনো বলতে পারছি না।’ স্থানীয় সরকারের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিএনপির দাবিগুলোর অন্যতম হলো, তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা। এগুলো যদি সরকার শিথিল করে তাহলে নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। যেমন বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে এলেন, নেতা-কর্মীরা বিপুল সংবর্ধনা দিলেন, কোনো ঝামেলা হয়নি। সেখানে যদি সরকার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করত, তাহলে অনেক ঝামেলা হতো। ঠিক এমনই নির্বাচনের আগে যদি পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে—সেখানেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে।

সর্বশেষ খবর