শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সু চির কাছে সংকট সমাধানের সময়সীমা চাইল ইইউ

সেনা নেতৃত্বকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দুই দিনের মাথায় দেশটির নেত্রী অং সান সু চিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ফোন করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আরেক দফা আহ্বান জানানো হয়েছে। ইইউর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি সু চির কাছে সংকট সমাধানের সম্ভাব্য সময়সীমা জানতে চেয়েছেন। সু চি ও মিয়ানমার সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের নিষ্ফল বৈঠকের পরদিন ইইউর পক্ষ থেকে সু চিকে ফোন করা হলো। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আরেক দফা সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানানো  হয়েছে। এদিকে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করার পর সে দেশে নিষেধাজ্ঞার দাবি উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে তা স্পষ্ট না করলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওই এলাকায় (রাখাইন) সংঘটিত নৃশংসতা নীরব দর্শকের মতো দেখতে পারে না বিশ্ব।’ ইইউর এক্সটার্নাল অ্যাকশনবিষয়ক ওয়েবসাইট ইইএএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণার দুই দিনের মাথায় সু চিকে টেলিফোন করে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে সু চিকে টেলিফোনে সহিংসতা বন্ধ, রাখাইনে ত্রাণকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ আর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের তাগিদ দিয়েছেন ইইউর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ অক্টোবর একই কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনির সভাপতিত্বে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ দেশটির জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর আমন্ত্রণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।

নিষেধাজ্ঞার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে : মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তা ও নৃশংসতায় জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ৪৩ জন আইনপ্রণেতা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের কাছে লেখা এক চিঠিতে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের ওই সদস্যরা বলেন, রাখাইনে যা ঘটেছে তা দৃশ্যত অস্বীকারের চেষ্টা করছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তারা রাজ্যটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানান। চিঠিতে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দাবি জানান তারা। আর রোহিঙ্গা সংকটের জন্য যারা সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী, তাদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানান মার্কিন আইনপ্রণেতারা। টিলারসনকে লেখা ওই চিঠিতে যারা সই করেছেন তার মধ্যে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টি ও বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি— দুই দলের কংগ্রেস সদস্যরাই আছেন। চিঠিতে বলা হয়, রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের পদক্ষেপ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বুধবার ওয়াশিংটনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের জন্য দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই এলাকায় সংঘটিত নৃশংসতা নীরব দর্শকের মতো দেখতে পারে না বিশ্ব।

সু চি-সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘের বৈঠক ‘নিষ্ফল’ : বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কোনো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমারে জাতিসংঘের পাঁচ দিনের সফর শেষ হয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে রাখাইন সফরকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, তাদের সফরে ‘কোনো বিজয় অর্জিত’ হয়নি। মিয়ানমার থেকে শূন্য হাতে ফিরেছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস লিখেছে, জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেফ্রে ফেল্টম্যান তাদের বিষয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেই দুই আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।

ফের নিরাপত্তা পরিষদে সংকটের স্থায়ী সমাধান চাইল বাংলাদেশ : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আবারও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্যালেস্টাইন সমস্যাসহ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর এক উন্মুক্ত আলোচনায় এ সমাধান চান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের বিপুল জনগোষ্ঠীর মানবিক সংকটসহ ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের সম্মিলিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও তুলে ধরেন তিনি। রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, ‘ইতোপূর্বে ও সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সামরিক জান্তাদের দ্বারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সমস্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছি এবং সংগত কারণেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দীর্ঘস্থায়ী এই অবৈধ দখল ও ফিলিস্তিনি জনগণের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’

 রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ তিন দশক ধরে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলা করছে। এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সম্মিলিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। নিরাপত্তা পরিষদ এসব দীর্ঘস্থায়ী সংকটের শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ঐকমত্য প্রদর্শন করছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; তা না করলে দীর্ঘমেয়াদি এ সমস্যা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দেবে।’ বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের কার্যকর মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে আনরোয়াকে বর্ধিত ও পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।

সর্বশেষ খবর