শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর

প্রসূতিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাই কোর্টের রুল জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতালে সেবা না পেয়ে রাস্তায় প্রসূতির সন্তান প্রসব ও এরপর নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ওই নারীকে কেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নজরে এলে গতকাল বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করে। এ ছাড়া ওই নারীকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দোষীদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না— রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সমাজকল্যাণ সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্যার সলিমুল্লাহ             মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক, ঢাকা  মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক, আজিমপুর শিশু মাতৃসদনের সুপারিনট্যান্ট, মাতৃসদনের চিকিৎসক নিলুফার, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও লালবাগ থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনার তদন্ত করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এবং আজিমপুর শিশু মাতৃসদনের সুপারকে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার প্রসব বেদনা নিয়ে ঢামেক হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং আজিমপুর শিশু মাতৃসদনে গিয়েও চিকিৎসা পাননি পারভীন আক্তার। পরে রাস্তার ওপরে ওই নারী সন্তান প্রসব করেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই নবজাতকের মৃত্যু হয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘রাস্তায় সন্তান প্রসবের পর শিশুর মৃত্যু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনার দিন পারভীনের সঙ্গে থাকা সোহেল নামে এক যুবক বলেন, পারভীনের গ্রামের বাড়ি যশোর। বেশ কয়েকমাস আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে পারভীন গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারে থাকতেন। আমিও তাকে চিনি না। গত সোমবার রাত ৩টার দিকে তার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। এ সময় সে আমার হাত-পা ধরে কেঁদে ফেলেন এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে বলেন, তার স্বাভাবিক ডেলিভারি হবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তারা আবার পরীক্ষা করে জানান, পারভীনের সিজার করাতে হবে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। ঢামেক হাসপাতালের চেয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভালো চিকিৎসক রয়েছে। তারা ডেলিভারি রোগীর ভালো চিকিৎসা করেন। এসব বলে তারা পারভীনকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠান। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে পারভীনকে মিটফোর্ডে নেওয়ার পর তারাও পরীক্ষা করে বলেন, সিজারে বাচ্চা নিতে হবে। কিন্তু তাদের ওখানে ভালো হবে না। তখন পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে সকাল সোয়া ৮টার দিকে মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাই পারভীনকে। কিন্তু সেখানে তার নামে কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না থাকায় তারা পারভীনকে ভর্তি নেবেন না বলে জানান। পারভীন আর টিকতে পারছেন না, যে কোনো মুহূর্তে সন্তান প্রসব হয়ে যাবে বলে তাদের অনুরোধ করলে তাকে তারা দ্বিতীয় তলার লেবার রুমে নিয়ে যান। তখন লেবার রুমে কনসালটেন্ট ডা. নিলুফা দায়িত্বরত ছিলেন।

সোহেল আরও বলেন, লেবার রুমে নেওয়ার পর এক নারী চিকিৎসক এসে বলেন, এর (পারভীন) তো সিজার করতে হবে। এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। তোমাদের কাছে কত টাকা আছে? তখন পারভীন ও সোহেল তাদের কাছে টাকা নেই বলে জানালে ওই চিকিৎসক চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের পোশাক পরিহিত এক আয়া এসে পারভীনের হাত ধরে নিচে নামিয়ে দিতে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন। তিনি বলেন, আপনার চিকিৎসা এখানে হবে না, আপনি অন্য হাসপাতালে যান। না হয় ঢামেক হাসপাতালে যান, আমরা ফোন করে দিচ্ছি। এই বলে আয়া তাকে টেনে নিচ তলায় আনেন। তখন পারভীনের ব্যথা আরও বেড়ে যায়। হাঁটতে পারছিলেন না। নিচে আনার পর পারভীন বের হতে না চাইলে গেটের দারোয়ানরাও তাকে টেনে বের করে দেন। এ সময় আমি পারভীনের হাত ধরে ৪-৫ কদম যেতেই পারভীন মাটিতে পড়ে যান এবং ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় হঠাৎ করে তার সন্তান প্রসব হয়। পরে আশপাশের কয়েকজন মহিলা এসে চারদিকে কাপড় ধরে কাজটি শেষ করেন এবং নবজাতককে একজন হাতে নেন। শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রায় দুই মিনিটের মতো হাত-পা নাড়াচ্ছিল। তখনো হাসপাতালের গেটে ও দো-তলার জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কয়েকজন নারী ডাক্তার, নার্স ও দারোয়ান বিষয়টি দেখছিলেন। কেউ এগিয়ে আসেননি। মিনিট দুয়েক পর শিশুটির মৃত্যু হয়। পারভীনের চিৎকার আর শিশুটির মৃত্যুর দৃশ্য দেখে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই কেঁদে ফেলেন। সোহেল জানান, শিশুটি মারা যাওয়ার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে হাসপাতালের দুজন স্টাফ পারভীনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে পারভীন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তশূন্যতা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন পারভীন। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর