শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে

রাহাত খান, বরিশাল

জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে

মজিবর রহমান সরোয়ার

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, বিএনপি আগামী সিটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে ভিতরে ভিতরে দলের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজও চলছে।

গত শনিবার বরিশাল মহানগরের পশ্চিম কাউনিয়ার নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনায় তিনি বরিশালের সার্বিক বিষয়, জাতীয় রাজনীতি এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আলোচিত নানা বিষয়ে কথা বলেন। মজিবর রহমান সরোয়ার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি। বরিশাল এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নেই বলে আওয়ামী লীগের দাবি উড়িয়ে দিয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, যেভাবে তারা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছে, সেই চিন্তা-ভাবনায় তারা যদি বলেন, তাহলে এ ধরনের কথা তারা বলতে পারেন। তবে জনগণ ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারলে আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতন ও দুঃশাসনের মূল্যায়ন হবে। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় বরিশালে বিএনপি তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি—এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, কোথাও প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী যদি বেশি ভোট পেয়ে গেছে, তখন পরের ধাপে আওয়ামী লীগ ভোট কেটে হলেও তাদের প্রার্থী পাস করিয়েছে। বরিশাল অঞ্চলটা ওই ধাপের মধ্যে পড়েছে। দেখা গেছে, মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই তারা প্রশাসনের সহায়তায় ভোর রাতে ভোট কেটে নিয়ে গেছে। সংসদ নির্বাচন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদে তারা সব ভোট কেটে নিয়ে গেছে। জনগণ সুযোগ পেলে এর প্রতিশোধ ভোটের মাধ্যমে নেবে। সরোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ বরিশালে উন্নয়ন করতে পারেনি। বিএনপি বরিশালে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বরিশাল বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর, রেডিও স্টেশন, শিক্ষা বোর্ড, সিটি করপোরেশনের যত উন্নয়নমূলক কাজ বিএনপির আমলে হয়েছে। বরিশালে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন-ব্যর্থতার চিত্র রয়েছে। তাদের ভোট কারচুপি এবং জোর করে ভোট নেওয়ার চিত্র জনগণের মধ্যে দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। জনগণের হাতে ভোটের অধিকার গেলে আওয়ামী লীগ টের পাবে। তিনি বলেন, বরিশালে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নেই। প্রশাসনের সঙ্গেও নেই। বিএনপি এখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। গত ৫ জানুয়ারি বরিশালে কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা ন্যক্কারজনক কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। এগুলো দুঃখজনক। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা উসকানি দিয়ে যাতে কোনো সংঘাত সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। বরিশালে বিএনপির তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই, সহযোগী সংগঠনগুলোও একরকম নিষ্ক্রিয়— জানতে চাইলে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে আমরা অনেক সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্যুত। এখন বেশিরভাগই পকেট কমিটি হয়। কাউন্সিল করে কমিটি করার মতো কোনো পরিস্থিতি দেশে নেই। কোথাও স্বাভাবিক মিছিল-মিটিং করা যায় না। কাউন্সিল করে কমিটি করা গেলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক শক্তিশালী হতো।  গত ৪ অক্টোবর বরিশালে মহিলা দলের কর্মিসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের তর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই কর্মিসভায় কেন্দ্রীয় নেত্রী যারা এসেছেন, তারা কমিটি দেখেই বলেছেন, মহিলা দলের ওই কমিটি বৈধ নয়। সেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার (শিরিন) বাদানুবাদ হয়েছে।

 তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে বিভিন্ন জায়গায় তর্ক হবে, বাকবিতণ্ডা হবে, গ্রুপিং হবে, লাঠালাঠি হবে—এরই নাম রাজনীতি। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সম্পর্কে সরোয়ার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বোমা নিক্ষেপের মামলা সরকারের আরেকটি ষড়যন্ত্র। তারা নিজেরা গাড়ি পুড়িয়ে বিএনপিকে জনগণের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করতে চায়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সাত দিন পর একদিন আদালতে যেতে হয়। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই সাড়ে সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনেক মামলা ছিল। সব উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন একের পর এক মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন, মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা যাতে আন্দোলন এবং নির্বাচন করতে না পারে সেই দুরভিসন্ধি করেছে সরকার। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মূল লক্ষ্য সুপ্রিম কোর্টের অধস্তন আদালতগুলো সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সরকার অত্যন্ত কৌশলে অধস্তন আদালতগুলো সুপ্রিম কোর্টের অধীনে না দিয়ে তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার রায় নিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির ছুটি প্রসঙ্গে সরোয়ার বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেওয়ার পরই আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। তারা বক্তৃতায় বলেছেন, তাকে আদালতে বসতে দেবেন না, দেশছাড়া করবেন। সাধারণ মানুষ বোঝে, আওয়ামী লীগ জোর করে ছুটি দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়া করেছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, তা একটা খারাপ দৃষ্টান্ত। বিচার ব্যবস্থার ওপর বড় আঘাত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো সময়ই ন্যায় বিচার-সুশাসন মানে না। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, তাদের যদি বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে দেশে আইনের শাসন থাকে না, গণতন্ত্র থাকে না।

সর্বশেষ খবর