শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইসির সঙ্গে সংলাপ শেষ

ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা মঞ্জুর, অলি চান সেনা মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টি (জেপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সংলাপের মধ্য দিয়ে গতকাল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শেষ হয়েছে। সমাপনী দিনের সংলাপে জেপি ‘ভালো’ নির্বাচনের এবং এলডিপি সেনা মোতায়েনের প্রত্যাশা করেছে। সংলাপে জেপি সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের পক্ষে মত দিয়েছে। সীমানা পুনর্বিন্যাস ও ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে  দলটি। সেই সঙ্গে ‘ভালো নির্বাচন হোক’ সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। জেপি অন্তত আটটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। এদিকে সংসদীয় আসনের বিদ্যমান সীমানা বহাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো করে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে এলডিপি। দুই দলের সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেপি : গতকাল সকালে জেপি চেয়ারম্যান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। বৈঠক শেষে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য তো সংবিধানের বাইরে যাবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বার বার যেখানে আঘাত করা হয়েছে, সেখানে আমাদের একটা স্ট্যান্ড ছিল। আমাদের অবস্থান নির্বাচনের পক্ষে। আগামীতে ‘ভালো নির্বাচন হোক’ সেই প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, সেই পাকিস্তান আমল থেকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ভালো নির্বাচনের প্র্যাকটিস করতে দেওয়া হয়নি। সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সেনা মোতায়েনের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না।’ পরে দলের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থবহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই। সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। তবে একটি বা দুটি রাজনৈতিক দল অংশ না নিলে অর্থবহ হবে না, তা নয়। ’৭০-এর নির্বাচনে মওলানা ভাসানীর দল অংশ না নিলেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আগামীতেও এ রকম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইসিকে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে বলেছি। প্রশাসনের সহায়তায় সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন করা যেতে পারে।’এলডিপি : সংসদীয় আসনের বিদ্যমান সীমানা বহাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো করে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে এলডিপি। বিকালে দলটির প্রেসিডেন্ট অলি আহমদের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে এ সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গতকাল নিবন্ধিত ৪০টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অলি আহমদ বলেন, ‘প্রতি ১০ বছর পর পর সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ব্যবস্থা করতে হয়। এটা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশেও এ ব্যবস্থা চালু নেই। এজন্য ২০১৩ সালে যে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে কারও আপত্তি রয়েছে বলে মনে করি না।’ এজন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণে কাজ বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, ভোটের ১৫ দিন আগে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সেনার তদারকি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরূপ ক্ষমতা দেওয়া জরুরি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সুপারিশসহ শর্তসাপেক্ষে ইভিএম চালুর পক্ষে এলডিপি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান অলি আহমদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ?‘সংসদ ভেঙে দিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ইসির এখতিয়ার নেই। আমরা সরকারের কাছে বলব, কেন দলগুলো এ নিয়ে কথা বলছে জানি না।’ লিখিত প্রস্তাবে দলটির প্রেসিডেন্ট বলেন, ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের ভোট ছাড়া অন্য নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত। ইসির রোডম্যাপ বিভ্রান্তিকর, সময় ক্ষেপণ ও অহেতুক জন অর্থব্যয়ের একটি প্রস্তাব। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা আরও স্পষ্ট হওয়া উচিত। ১৬তম সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে রায়ে বলা হয়েছে। ইসিকে শক্তিশালী করারও নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। ইসি এখনো দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সর্বশেষ খবর