শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সৌন্দর্যের হাতছানি ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের খালেধ

নিজামুল হক বিপুল

সৌন্দর্যের হাতছানি ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের খালেধ

পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশে চলছে খাল খননের কাজ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঁচ হাজার ২৮৬ কোটি টাকায় রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের দুই পাশে খাল খননের কাজ এগিয়ে চলেছে। কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই ব্যয় আরও দুই হাজার কোটি টাকা বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও এরই মাঝে পূর্বাচল প্রকল্পের ৩০০ ফুট সড়কের দুই পাশ ঘিরে অপরূপ সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বাস্তবায়নাধীন খাল প্রকল্পকে ঘিরেই এমন সৌন্দর্যের হাতছানি। খাল খনন কাজ শুরু হওয়ায় চেহারা পাল্টাতে শুরু করেছে কুড়িল ফ্লাইওভারের গোড়া থেকে বালু নদী পর্যন্ত পূর্বাচল প্রকল্পের। দুই পাশে ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্পের কাজ শুরুর তিন মাসের মধ্যেই দৃষ্টিনন্দন রূপ লাভ করতে শুরু করেছে পূর্বাচল এলাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের খনন কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। ৩০০ ফুট সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদ করে খাল খনন হওয়ায় এখনই অন্যরূপ ধারণ করেছে প্রকল্প এলাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কের দুই পাশে ১০০ ফুট খাল প্রকল্প নির্মাণের পর এটি হবে রাজধানী ঢাকার বিনোদন ও প্রশান্তির প্রাণকেন্দ্র। হাতিরঝিলকেও ছাড়িয়ে যাবে এর সৌন্দর্য। প্রকল্প জুড়ে করা হবে সবুজায়ন। থাকবে বিনোদনের নানারকম ব্যবস্থা। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো এলাকা। পূর্বাচলে বসতি ও স্থাপনা গড়ে ওঠার আগেই খাল প্রকল্পের কারণে পূর্বাচলের চেহারা হয়ে উঠবে রঙিন। পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সমস্যারও স্থায়ী সমাধান হবে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ১০০ ফুট খাল প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ২৮৬ দশমিক ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার হাজার ৩৮৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকে অনুমোদন পায়। ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডের (ডিপিএম) মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য ক্ষতিপূরণসহ জমি অধিগ্রহণ বাবদ দুই ধাপে ৪ হাজার ৩৮৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঢাকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬০৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তবে কাজ শেষ হতে উন্নয়ন ব্যয় আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা বাড়তেও পারে। রাজউক সূত্র জানায়, বোয়ালিয়া খালের উভয় পাশে ওয়াকওয়েসহ খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণ এবং ১৩ কিলোমিটার ঘাস ও গাছ লাগানোর মাধ্যমে প্রকল্পটি দৃষ্টিনন্দন করা হবে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নান্দনিক এক শহরের দেখা পাবেন ঢাকাবাসী। ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দী নগরবাসী পাবেন নির্মল ও দৃষ্টিনন্দন একটি প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কুড়িল ফ্লাইওভারের চার পাশে জলাবদ্ধতাও থাকবে না।  কুড়িল ফ্লাইওভারের পূর্ব প্রান্ত থেকে পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের দুই পাশ ধরে বালু নদীর ব্রিজ পর্যন্ত ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত ৮ জুলাই থেকে। রাস্তার দুই পাশে ১৩ দশমিক ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের আগস্টে। সেই লক্ষ্যে এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে শত শত শ্রমিকের বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। পূর্বাচল খাল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাল খননের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। প্রকল্পটির অধীনে ১৩ দশমিক ৬৪৩ কিলোমিটার খাল, ১৩ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৩৯ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, চারটি ইউলুপ, খালের ওপর ১৩টি আর্চওয়ে ব্রিজ তৈরি করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে ফুটওভার ব্রিজ থাকবে চারটি। এ ছাড়া থাকবে পাম্পহাউস, দুই হাজার ২৭০টি স্ট্রিটলাইট, খালের স্বচ্ছ জলে ঢেউ খেলে চলবে ওয়াটার বাস, থাকবে ১২টি ওয়াটার বাস স্টপেজ। ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে দুই পাশেই সাড়ে ৬ মিটার সার্ভিস সড়ক থাকবে। এরপর তিন মিটার প্রশস্ত হাঁটার রাস্তার পর ৩০ মিটার খাল থাকবে। খালের পর আবার দুই মিটার হাঁটার রাস্তা, ছয় মিটার সার্ভিস রোড থাকবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি শেষ হলে রাজধানীবাসীর জন্য এটি নজরকাড়া বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে।

সর্বশেষ খবর