শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গতি পাচ্ছে না পাঁচ নদী সংস্কার প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

আঁতুড়ঘরেই পড়ে আছে রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী সংস্কারের কাজ। এ পাঁচ নদ-নদী খনন, সংস্কার, দখল ও দূষণমুক্ত করে পরিবেশবান্ধব করার একটি উদ্যোগ গত বছর নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এ প্রস্তাব পাঠিয়েছিল; যাতে নৌবাহিনীকে দিয়ে এ পাঁচ নদ-নদীকে খনন ও সংস্কার করে এগুলোর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়। এ পাঁচ নদ-নদী সংস্কারের  জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটি এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমলাতন্ত্রের গ্যাঁড়াকলে পড়ে সভা আর কর্মপরিকল্পনার মধ্যেই সেই উদ্যোগ থমকে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী এবং বন্দরনগরীকে জলবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে এই নদ-নদীগুলো খনন, সংস্কার, দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে এ কাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে করানো যেতে পারে। তাতে দ্রুততম সময়ে ও পরিচ্ছন্নভাবে কাজ হওয়ার সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘ঢাকা শহর ভৌগোলিক কারণেই বৃষ্টিপাত অঞ্চল। মৌসুমি বায়ুর প্রবাহের কারণে ঢাকায় তুলনামূলক বৃষ্টিপাত বেশি হয়। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানি কোথাও যেতে পারে না। কারণ আমরা ঢাকাকে একটি গামলা বানিয়ে রেখেছি। ফলে বৃষ্টির পানি নগরীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি যেমন দ্রুত নামতে পারে না, তেমন এত পানি ধারণও করতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো খনন করে দখল ও দূষণমুক্ত করা গেলে ঢাকাকে বাঁচানো যাবে। একই সঙ্গে প্রাণও ফিরে আসবে নদ-নদীগুলোয়। না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার চারপাশের চার নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে এগুলোর দুই তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা, নদ-নদীর পানি দূষণমুক্ত করা, দুই তীর রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে দেয়াল তুলে নদ-নদী রক্ষা করা, ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদীর তলদেশ পরিকল্পা করে এবং সংস্কারের মাধ্যমে নদ-নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল গত বছরের জুন-জুলাইয়ে। প্রস্তাবটি তৈরির পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এ প্রস্তাবেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর নদী সংস্কারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ওই প্রস্তাবে রাজধানীর চার পাশের চার নদ-নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সংস্কারের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে নৌবাহিনীকে দিয়ে এটি বাস্তবায়নেরও প্রস্তাব করা হয়েছিল। যেহেতু নৌবাহিনীর নদী নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করলে এ প্রকল্প স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকল্পটির বিষয়ে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর পর গত বছরের নভেম্বরের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে দেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটির সদস্যসচিব হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন মহাপরিচালক। অনূর্ধ্ব ১৯ সদস্যের কমিটি বিষয়টি নিয়ে প্রতি মাসে এক থেকে দুটি সভা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও গত প্রায় ১১ মাসেও এ ব্যাপারে কমিটি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। জানা গেছে, কমিটি এই ১১ মাসে মাত্র দুটি সভা করেছে। তার পর থেকে আর কোনো খবর নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নৌবাহিনীকে কাজ না দিয়ে সরকারের পদস্থ আমলারা এটিকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর