শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

উচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে

মাহমুদ আজহার

উচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে

টি এইচ খান

উচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টি এইচ খান। ইদানীংকালে উচ্চ আদালত নিয়ে নানা ঘটনাপ্রবাহে মর্মাহতও তিনি। আজ তার ৯৭তম জন্মবার্ষিকী। ৯৮ বছরে পা দেওয়া প্রবীণ এই আইনজীবী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কে আমি খুবই মর্মাহত। আদালতের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবারই। দেশের সব নাগরিককেই উচ্চ আদালতের প্রতি আস্থায় আনতে হবে।’

তিনি এখনো আইন পেশায় সক্রিয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে তিনি সবচেয়ে প্রবীণ আইনজীবী। জটিল মামলা নিয়ে এখনো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে সক্রিয়। বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কিছুটা কমলেও বড় ধরনের কোনো অসুখে নেই এই বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখনো নিয়মিত প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন তিনি। বিচারপতি টি এইচ খান বিএনপির এক নম্বর ভাইস চেয়ারম্যানও। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসায় আইনি বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি ছাড়াও পত্রিকা পড়েন। বিবিসি, সিএনএনসহ বাংলাদেশের টিভির সংবাদ দেখে সময় কাটে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিকের। অবশ্য তাকে চলাফেরা করতে হয় ওয়াকারের সাহায্যে।

চলমান রাজনীতি কিংবা গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলতে চান না বিচারপতি টি এইচ খান। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব পক্ষকেই সংযম ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে।’ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে আশাবাদীও টি এইচ খান। তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী, দেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরোত্তর ভালোই হবে। তরুণ প্রজন্ম দেশের নেতৃত্ব দেবে। দেশ আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে। এর মধ্যে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনসেবার মনোভাব নিয়ে সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’

টি এইচ খানের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বাবা পরিবারের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বিব্রত, বিচলিত ও অনেকাংশে হতাশ। বাবা প্রায়ই বলেন, “দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সুদৃঢ় হওয়া জরুরি। বিচার বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আরও শক্তিশালী করতে হবে।” চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাবা। সব সময় তিনি বলেন, “ব্যক্তির চেয়ে দেশ বড়”।’ হাঁটুতে দুর্বলতার কারণে প্রবীণ এই আইনজীবীর কারও সহায়তায় চলাফেরা করতে হয়। বাসায় নিজে নিজেই ওয়াকার দিয়ে চলাচল করেন। তিন ছেলে আফজাল এইচ খান, ফজলে এলাহী খান ও ফয়সাল এইচ খান। আফজাল এইচ খান আর ফয়সাল এইচ খান আইন পেশায় নিযুক্ত। ফজলে এলাহী খান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। একমাত্র মেয়ে ডা. মাহমুদা ফাতেমা খান রাজধানীর হলি ফ্যামিলিতে চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত। ২০১১ সালের ১৭ মে টি এইচ খানের সহধর্মিণী মারা যান।

১৯৬৯ সালের মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন টি এইচ খান। এর আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ‘সিনিয়র গভর্নমেন্ট প্লিডার’ অ্যাডভোকেট জেনারেলের (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৩ সালে ফের আইন পেশায় ফিরে যান। একাধিকবার তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ছিলেন। ’৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাধারে আইন ও বিচার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন, তথ্য ও বেতার, ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রবীণ এই আইনজীবী। ’৯৫ সালে জাতিসংঘের অধীনে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালে (আইসিটিআর) পাঁচ বছর বিচারপতি ছিলেন। ২০০১ সালে সেখান থেকে ফিরে তিনি ফের আইন পেশায় যুক্ত হন। আন্তর্জাতিক আদালতে টি এইচ খানই এশিয়া মহাদেশের একমাত্র বিচারপতি। ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। বেশ কিছু দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপনাও করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর