রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী ৫১

মাছের কার্টনে নারীর লাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

মাছের কার্টনে নারীর লাশ

সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। হরতালের সমর্থনে আগের রাতে চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন বোমায় কাঁপছে  দেশ। গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্ক চারদিকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলছে তল্লাশি। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ফেনীর ছাগলনাইয়ার পুরানা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুভপুর  সেতুতেও চলছে ব্যাপক তল্লাশি। সব ধরনের যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। যানবাহনের ভিতরেও ভালো করে দেখে নিচ্ছে পুলিশ। এ সময় একটি  সিএনজিচালিত অটোরিকশাও পড়ে তল্লাশিতে। অটো থামার পর যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা হয়। টর্চ লাইট দিয়ে সিএনজিতে আলো ফেলে ভিতরে একটি কার্টন দেখতে পায় পুলিশ। ‘এই এর ভিতর কী?’ যাত্রীর কাছে জানতে চায় পুলিশ। ‘ভিতরে ইলিশ মাছ’— জবাব দেয় সেই যাত্রী। পুলিশ এবার সার্চ করতে চায় সেই কার্টনটি। কার্টনটি ভীষণ ভারী। তুলতে গিয়ে পুলিশ বুঝতে পারে। ধরাধরি করে অটো থেকে কার্টনটি  নিচে নামায়। স্কচটেপ দিয়ে লাগানো ককসিটের তৈরি কার্টনটি খোলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে স্কচটেপ টেনে খুলতে থাকে পুলিশ। এরপর কার্টনের মুখ খোলে। সেদিকে তাকিয়েই পুলিশ থমকে যায়। হতবাক। লাশ লাশ বলে চিৎকার করে ওঠে একজন পুলিশ। এ সময় ওই যাত্রীকে ঘিরে ধরে। জাপটে ধরে ফেলে তাকে। পুলিশ ওই কার্টন থেকে এক নারীর লাশের দুটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে।  ২০১২ সালের এপ্রিলে সাইফুল ইসলাম তার স্ত্রী ফারহানাকে হত্যার পর চার টুকরা করে। কিন্তু টুকরাগুলোর ওজন এত বেশি যে, একা এগুলো বহন করা সম্ভব ছিল না। যে কারণে দুই টুকরা কার্টনে ভরে চট্টগ্রামের বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সাইফুল। কিন্তু ধরা পড়ে পুলিশের কাছে। সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামে শিপইয়ার্ডে কাজ করতেন। কার্টন ভর্তি লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সাইফুল ইসলামকে জেরা করতে শুরু করে। সে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষ বর্ণনা করে। সাইফুল জানায়, খুনের ঘটনার চার বছর আগে ফারহানার সঙ্গে তার পরিচয়। পরিচয়ের এক বছর পর পরিবারের অমতে বিয়ে করে ফারজানাকে। চট্টগ্রাম বন্দর থানার নিউমুরিং আবাসিক এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে স্ত্রী ফারজানা ইয়াসমিনকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সাইফুল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিয়ের দু’বছর পর তাদের মধ্যে দূরত্ব শুরু হতে থাকে। পরিবারের চাপে সাইফুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন এক কলেজছাত্রীকে। এ নিয়ে ফারজানার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ প্রকট হয়। এর জের ধরে ২২ এপ্রিল রাতে দু’জনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। এরপর ফারজানা ঘুমিয়ে পড়লে ঘুমন্ত স্ত্রীকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সাইফুল। পরদিন ছিল শনিবার। সারা দিন স্ত্রীর লাশ কী করবে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে সাইফুল। পরে লাশটিকে মাটিচাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গোটা লাশ বহন করা কষ্টকর হবে চিন্তা করে লাশটিকে ছুরি দিয়ে চার টুকরা করেন। এরপর দুই টুকরো বাসার  রেফ্রিজারেটরে (ফ্রিজ) ভরে রাখে। বাকি দুই টুকরো মাছ বহনের কার্টনে ভরে বরফ দিয়ে গ্রামের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ বল্লভপুরের দিকে রওনা হন। চট্টগ্রাম  থেকে বাসে করে মাছের দুটি কার্টন নিয়ে তিনি মিরসরাইয়ের বারইয়ার হাট পৌঁছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর