রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে গতি

৭২ হাজার ভিসা, গেছেন ৩৭ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিন ধরে চলা স্থবিরতার পর গতি ফিরেছে মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিতে। বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২০ হাজার শ্রমিক নেওয়ার জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছেন দেশটির নিয়োগকারীরা। ইতিমধ্যে ৭২ হাজার ভিসা ইস্যু হয়ে গেছে। প্রক্রিয়া শেষে সেদেশে গিয়ে কাজেও যোগ দিয়েছেন ৩৭ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক। সব প্রক্রিয়া শেষে ফ্লাইটের নির্ধারিত তারিখের অপেক্ষায় রয়েছেন আরও ৫ হাজার বাংলাদেশি। ভিসা ইস্যু হওয়া বাকি ৩০ হাজারের প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন চালু হওয়া জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কোনো শ্রমিক যে প্রতারিত হচ্ছেন না এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টায় জনশক্তি রপ্তানির গতিও বাড়ছে প্রতি মাসেই। ফলে জনশক্তি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো সোর্স কান্ট্রি হিসেবে ঘোষণা করা মালয়েশিয়া আবার চলে এসেছে বিদেশ গমনেচ্ছুদের আগ্রহের কেন্দ্রে। এদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি মালয়েশিয়ার সরকারকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে অভিবাসন ব্যয় কমানোর। মালয়েশিয়ান সরকার তার এই অনুরোধকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে করে সামনে শ্রমিকদের যাওয়ার খরচ আরও কমে আসবে। নতুন গতি তৈরি হবে জনশক্তি রপ্তানিতে। বায়রার সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, মালয়েশিয়ায় ইতিবাচকভাবে শ্রমশক্তি পাঠানোর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও পড়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরব পুনরায় বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিচ্ছে। আরব আমিরাতের সমস্যাও নিরসনের অবস্থা তৈরি হয়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জনশক্তি রপ্তানির বাজার মালয়েশিয়া নানাবিধ বিশৃঙ্খলার কারণে ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও নানা অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর নামে মানব পাচার করছিল বেশ কিছু নামধারী রিক্রুটিং এজেন্সি। দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়া শ্রমিকদের কপালে জুটত কেবল প্রতারণা। ঘুরতে হতো মালয়েশিয়ার রাস্তায় রাস্তায়। পরে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানির জন্য জিটুজি পদ্ধতি চালু করে মালয়েশিয়া। ২০১৫ সালে বাজার চালু হলেও ধীর গতির কারণে এই পদ্ধতি পড়ে সমালোচনার মুখে। এরপর বেসরকারি এজেন্সিকেও সংযুক্ত করে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালু করে মালয়েশিয়া। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করা  বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে অন্য কাউকে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দিতে ইচ্ছুক নয় মালয়েশিয়ার সরকার। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী গিয়েছিলেন এক লাখ ৩১ হাজার। কিন্তু বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালে সেদেশে যেতে পারেন মাত্র ৯০০ জন। ২০১২ সালে এই সংখ্যা আরও কমে আসে। পরে ২০১৫ সালে যায় ৩০ হাজার ৫০০ জন। ২০১৬ সালে শ্রমিক যায় প্রায় ৪০ হাজার। তবে চলতি ২০১৭ সালে তিন মাস বাকি থাকতেই আগের বছরের সংখ্যা পেরিয়ে ৪২ হাজার শ্রমিক গেছেন মালয়েশিয়ায়। সর্বশেষ গত কয়েক মাসে যে গতি এসেছে তাতেই আশাবাদী হচ্ছেন সবাই। কারণ চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও যেখানে যথাক্রমে মাত্র ২০৭ এবং ১৪২ জন শ্রমিক মালয়েশিয়া গেছেন সেখানে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৪ হাজার ৭৬৮ ও ১২ হাজার ৩৯২-তে। বায়রা সূত্রের খবর, বাংলাদেশের ১ লাখ ২০ হাজার কোটার মধ্যে চলতি সপ্তাহের শেষে ৪২ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া  পৌঁছবেন। প্রক্রিয়াধীনদের মধ্যে ১৪ হাজার শ্রমিক এসইভি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন ফ্লাইটের জন্য, ৫ হাজারের ভিএলএন সম্পন্ন, ৬ হাজার রয়েছেন আইএসসি ধাপে, ২ হাজার অপেক্ষায় আছে ভিডিআর অনুমোদনের, ১৪ হাজার অপেক্ষায় আছে হাইকমিশনের সত্যায়নের এবং ২০ হাজার বিদেশ গমনেচ্ছু অপেক্ষায় আছেন নিয়োগ দাতার অনুমোদনের। জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংযুক্ত করে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালু হওয়ার পর কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে লক্ষাধিক চাহিদাপত্র পাঠান দেশটির নিয়োগকারীরা। আগে চাহিদাপত্র আসার পর যাচাই-বাছাই ছাড়া শ্রমিক পাঠানো হতো। কিন্তু এবার চাহিদাপত্র পাওয়ার পর প্রতিটি  কোম্পানিতে সরেজমিন খোঁজখবর করে চাহিদাপত্র সত্যায়িত করেছে হাইকমিশন। সরেজমিন খোঁজখবর করে সত্যায়িত করায় যে ৩৭ হাজার বাংলাদেশি ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় কাজে যোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হাইকমিশনে অভিযোগ করতে আসেননি। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। দিন দিন সবার মানসিকতাও পরিবর্তন হবে।

আরও গতি আসবে জনশক্তি রপ্তানিতে। দূতাবাস সূত্র জানায়, দূতাবাসের শ্রম শাখার কর্মকর্তারা সরেজমিন ফ্যাক্টরি ভিজিট করে মালিক পক্ষ ও কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক, কর্মস্থল ও আবাসন স্থান পরিদর্শন,  বেতন কাঠামো, চিকিৎসাসেবা, ওভারটাইম, বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় কিনা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে। দেখা হয় কর্মরতদের পে স্লিপ, কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাব, শেয়ার, লাইসেন্স, উৎপাদন বা রপ্তানি সক্ষমতাসহ নানা দিক। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক এনে প্রতারণা করার কোনো সুযোগ থাকে না নিয়োগকারীদের।

সর্বশেষ খবর