রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দীর্ঘ পথ চলায় ক্লান্তি নেই তোফায়েলের

শিমুল মাহমুদ

দীর্ঘ পথ চলায় ক্লান্তি নেই তোফায়েলের

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নন্দিত মহানায়ক বরেণ্য রাজনীতিক ও গণমানুষের নেতা তোফায়েল আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন আজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য রাজনৈতিক সহকর্মী তোফায়েল আহমেদের জন্ম ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর ভোলার কোড়ালিয়া গ্রামে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় আর বিকাশমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার তোফায়েল আহমেদ মাটি ও মানুষের সেবায় অবিরাম কর্মমুখর। দীর্ঘজীবী হোন তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী জননেতা তোফায়েল আহমেদ কলেজ জীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের ভিপি ও পরে ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬৭ থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত ডাকসুর ভিপি থাকাকালে চারটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রদত্ত ৬ দফাকে হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তুমুল গণআন্দোলনের ফলে দীর্ঘ ৩৩ মাস কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধুসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সব রাজবন্দীকে ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দিতে বাধ্য হয় স্বৈরাচারী পাকিস্তানি সরকার। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন তিনি।

১৯৬৯-এ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। বর্ণাঢ্য ছাত্র রাজনীতি শেষে ’৭০-এর ৭ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বস্তুত এরপর সংগ্রামী জননেতা তোফায়েল আহমেদ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের একজন বলিষ্ঠ সংগঠকে পরিণত হন। আবাসিক হল ও ডাকসুর ভিপি থাকাকালে তিনি বঙ্গবন্ধুর একান্ত সাহচর্যে আসেন। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ভোলার দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ‘মুজিববাহিনী’র অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন তোফায়েল। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সংগ্রামে তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

১৯৭২-এর ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তাকে রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ দেন। ’৭৩ সালে ভোলা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে গৃহবন্দী ও পরে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ ৩৩ মাস তিনি কারান্তরালে ছিলেন। ’৭৮-এ কুষ্টিয়া কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৬, ’৯১, ’৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে পরপর তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদের অবদান ইতিহাসে উজ্জ্বল। সামরিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করার কারণে তিনি এরশাদ আমলে চারবার এবং ১৯৯৫-৯৬-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবির আন্দোলনে খালেদা জিয়ার আমলেও দীর্ঘদিন কারাবন্দী ছিলেন। এ ছাড়া ২০০২-এ খালেদা-নিজামী জোট সরকারের শাসনামলেও তাকে কারাবন্দী করা হয়। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে সততা, মেধা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও বাগ্মিতার ফলে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জনকলাণমূলক রাজনীতির অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন তিনি। ছাত্রাবস্থা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় অবিচল তোফায়েল আহমেদের ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একই আদর্শে ও দলে ধারাবাহিক থেকে নজিরবিহীন ‘রাজনৈতিক ইন্টিগ্রিটি’ বজায় রেখেছেন। এলাকার সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছেন তিনি। গণমানুষের দাবি আদায়ে আজীবন আপসহীন তোফায়েল আহমেদের তেজস্বী কণ্ঠস্বর রাজপথে ও সংসদে সর্বদা সোচ্চার। স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার মহতী স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম সারথি সংগ্রামী গণনায়ক তোফায়েল আহমেদের শুভ জন্মদিনে তার দীর্ঘজীবন কামনা করছি।

সর্বশেষ খবর